জন্মভূমি ডেস্ক : আমন ধান ঘরে তোলা এখনও শেষ হয়নি। অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির পাশাপাশি ডিজেল-সার-শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে এবার আমন চাষে বেগ পেতে হয়েছে খুলনার চাষিদের। ইতোমধ্যে চাষিরা বোরো আবাদে নেমেছেন। কেউ বীজতলা প্রস্তুত করছে। আবার কেউ জমিতে চারা রোপনের কাজ সম্পন্ন করেছে। কৃষকদের বোরো আবাদে আগ্রহ বাড়লেও ডিজেল-বীজ-সার-শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ জোগাড়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। পুরো মৌসুমের খরচ নিয়ে চিন্তিত তারা।
সরেজমিন কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতেলখালী বিলে যেয়ে দেখা যায়, ৪/৫ জন কৃষক এ বছর প্রথম বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছে। তারা ১৫/২০ দিন পূর্বে বীজতলায় বীজ বপন করেন। কথা হয় চাষি জিএম ইসমাঈল হোসেনের সাথে।
তিনি বলেন, আমাদের ১৬ বিঘা জমি রয়েছে। অনাবৃষ্টির পরে অতিবৃষ্টিতে আমন খুব বেশি ভালো হয়নি। বিঘা প্রতি ১০/১২ মণ আমন ধান পেয়েছি। গত বছর পাশের বিলে বোরো ধান ভালো হয়েছিল। এবার তিন লাখ টাকা ব্যয়ে বোরিং মেশিন বসিয়ে প্রথম বোরো চাষ করতেছি। মেশিনের পানি দিয়ে একশ’ বিঘা জমিতে বোরা চাষ করা যাবে। সিকি (চার ভাগের এক ভাগ) ধান আমাকে দিবেন এই শর্তে অন্যদেরও পানি দিচ্ছি।
সেখানে কথা হয় ৬ কিলোমিটার দূরবর্তী জয়পুর গ্রাম থেকে আসা রবিউল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় নোনা পানি থাকায় ধান হয় না। এজন্য এই বিলে ২০ হাজার টাকা হারিতে (বর্গা) ৫ বিঘা জমি নিয়ে বোরো চাষ করতেছি।
তিনি বলেন, এমনিতেই উৎপাদন খরচ জোগাড় করতে হিমসিত খেতে হবে। হাইব্রিডে খরচ ও ঝুঁকি আরও বেশি। কৃষি অফিসের কোন সহযোগীতা পাইনা। এজন্য মাত্র এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান আর বাকি চার বিঘায় উফসি জাতের ধান লাগাবো।
একই উপজেলার পশ্চিম মহারাজপুর বিলের চাষি নূর ইসলাম জানান, ১৬ টাকার সার এখন ২৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে পানির জন্য খরচ দিতে হচ্ছে চার হাজার টাকা।সবমিলে বিঘা প্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। উৎপাদন খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের গ্রাজুয়েট গ্রামের এয়াকুব আলী বলেন, কয়েকবছর ধরে এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করি। ফলন সন্তোষজনক হয়। এবার কৃষি অফিস থেকে চার কেজি বীজ ও সার পেয়েছি। জমিতে ধান রোপন শেষ হয়েছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে ৬২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ এবং ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। তন্মাধ্যে ৩৯০৫৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ২৩৬৭৫ হেক্টর জমিতে উফসি জাত চাষ করা হয়। হেক্টর প্রতি হাইব্রিড ধানের গড় উৎপাদন হয় ৪ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন আর উফসি জাতের গড় উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ এবং ২ লাখ ৭০ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এ বছর ৬২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তন্মাধ্যে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ২৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে উফসি জাত। খুলনার নয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ডুমুরিয়ায়। আর সবচেয়ে কম ২১৫ হেক্টর দাকোপে। ২২ হাজার চাষিকে হাইব্রিড বীজ এবং ১৫ হাজার চাষিকে উফসি বীজ ও সার দেয়া প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
কয়রা উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা অসিম কুমার দাস বলেন, সরকারি প্রণোদনা পেয়ে ও নিজেদের প্রয়োজনে চাষিদের আগ্রহ বেড়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ সম্পন্ন হয়েছে।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, ৩৪০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হবে বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে ১০/১২ শতাংশ জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ১৩১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে। ১১ হাজার ৫০০ চাষিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, জেলার লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশ জমিতে রোপন সম্পন্ন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রোপনের মত বীজতলা প্রস্তুত রয়েছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি ধানের দামও বেশি হয়েছে। চাষিদের সহায়তায় বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে চাষিদের পাশে থাকছেন। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো চাষ হবে।