মোঃ এজাজ আলী : দুই হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতার খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ নানা কারনে তা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকায়। ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। তবে এবারও হয়নি। এরপর তিনদফায় আরো তিন বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ গত মে মাসে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার সময় ২০২৩ সালের ৩০ জুন। ভৈরব নদের তীরে ১৯০৬ সালে নির্মাণ করা হয় খুলনা জেলা কারাগার। ৬০৮ জন ধারনক্ষমতার জরাজীর্ণ এ কারাগারে এখন বন্দীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জনের মতো। মাঝে বন্দি তিনগুন ছাড়িয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে নতুন জেলা কারাগার নির্মাণের উদ্দ্যোগ নেয় কারা অধিদপ্তর। খুলনার সিটি বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে চক মথুরাবাদে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নির্মিত এ কারাগারে মাষ্টারপ্লান অনুযায়ী চার হাজার বন্দি রাখা যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দফায় দফায় ব্যয় বাড়লেও নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না। কাজের এ দীর্ঘসুত্রিতায় খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনার বড় বড় কাজগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। কারাগার নির্মাণ প্রকল্প তারমধ্যে অন্যতম। প্রকল্প পরিচালক মোক্তার আহমেদ জানান, ১১ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় তারা নিজেরাও বিব্রত। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারাগার নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বহী প্রকৌশলী রাজিবুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি ২০১১ সালে পাশ হলেও এর অবকাঠামো কাজ শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। এর মধ্যে করেনার কারনে দুই বছর কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন দ্রুতগতিতে তা এগিয়ে চলেছে। ভবনের কাজ শেষ। হাসপাতাল, স্কুল, সড়ক, ড্রেনসহ অন্যান্য কাজও নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে। সরেজমিনে নির্মাণ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কারাগারের এলাকার ভেতরে বিভিন্ন শ্রেণির বন্দি ব্যারাক, কারারক্ষী কোয়র্টারসহ একতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ভবনগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও চারতলায় হাজতখানাভবন, দুই তলা স্কুলভবন, পয়ঃবর্জ্য শোধনাগারের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। ওয়াকওয়ে, অভ্যন্তরীন সড়ক ও ড্রেনের কাজ শুরুই হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন এ কারাগারটি নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসাবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্ক শেড। একইভাবে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং কারারক্ষীর সন্তানদের জন্য হল, লাইব্রেরী, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রী থাকবে। শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারন নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধূলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।