শেখ আব্দুল হামিদ
ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম বাড়ানোর পর এখন বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরিষার তেলের দাম। খুলনায় কেজিতে এ তেলের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে সরিষার তিন ধরনের তেল পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে মেশিনে ভাঙানো তেলের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির তেল যেমন আছে, সেই সঙ্গে মেলে ঘানি ভাঙানো তেলও।
বাজারে ঘানি ভাঙানো তেল মিলছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। বছর খানেক আগেও সরিষার তেলের (মেশিনে ভাঙা) দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮০ টাকা। সেই তেল বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকায়।
খুলনার বড় বাজারসহ সন্ধ্যা বাজার , গল্লামারী বাজার, নিউমার্কেট ঘুরে সরিষার তেল ২৮০ টাকায় বেচতে দেখা গেল। পাঁচ কেজির দাম এক হাজার ৪০০ টাকা। সন্ধ্যা বাজারে তেল কিনতে এসে বসুপাড়ার রাজু আহমেদ বলেন, “রোজার আগে থেকে সয়াবিন তেলের সংকট ভীষণভাবে দেখা দিলে আমরা সরিষা তেল কিনতে শুরু করি। সরিষার তেলের দাম গত ছয় মাস আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকা। রোজার আগে এই দাম বেড়ে ২২০-২৮০ টাকায় গড়ায়। গত এক সপ্তাহ যাবত এই তেল খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।”
সয়াবিন তেল সংকটের পর থেকে এর বিরূপ প্রভাব অন্য তেলেও পড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তেল ব্যবহারে কৃপণতা দেখিয়েও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারছি না। বাচ্চারা একটু ভাজা-ভাজি খেতে চায়; কিন্তু কীভাবে করব, খুঁজে পাই না।”
বটিয়াঘাটার সরিষা তেল ব্যবসায়ী বিজয় কুমার বলেন, “গত ৩/৪ মাস আগেও সরিষা তেল ছিল একটা সৌখিন পণ্য। বিশেষ করে আচার, ভর্তার জন্য সরিষার তেল কিনতেন ক্রেতারা। সয়াবিনের সংকটে এখন অনেকেই সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকেছেন। সরিষা তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কী করব, এখন সরিষার দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ। আগে মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
“সরিষা তেলের চাহিদা বাড়ছে শহরে, সেজন্য পাইকারি পর্যায়ে সরিষার দামও বাড়ছে। বেশি টাকায় এনে সরিষা থেকে তেল করে আবার বিক্রি করা- খুব একটা লাভ আমাদের হয় না।”
বড় বাজারে কথা হলো মুদি দোকানি আবুল কাশেমের সঙ্গে। তার কথায়, “বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট থাকলেও এখনও সরিষার তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। রোজার আগে একবার বেড়েছিল। বর্তমানে এক লিটার বিভিন্ন কোম্পানির সরিষার তেলের দাম ৩৪০-৩৫০ টাকা। অন্যদিকে খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।”
বড় বাজারে তেল কিনতে আসা অসিম কুমার বলেন, “এখনও বাজারে সয়াবিন তেল সেইভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য সরিষা তেল নিতে হচ্ছে। সেখানেও দেখি সয়াবিনের উত্তাপ। “যারা ব্যবসা করেন, তারা তো আর ধর্মের কথা শোনে না। ক্রেতাদের দুর্ভোগের কথা জানতে চায় না। ওরা লাভের কথা শোনে। সুযোগ পেলে লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়- এটাই এখন নিয়ম। কেউ দেখবার নেই। আমরা আছি বিপাকে।”
পাশে থাকা তার সহধর্মিনী কল্যাণী কুন্ডু যোগ কওে বলেন, “সয়াবিন তেল ও সরিষার তেলের দাম এখন প্রায় কাছাকাছি। সয়াবিনের তেলের তুলনায় সরিষার তেল স্বাস্থ্য সম্মত। স্বাদও আলাদা। ভাবছি এখন থেকে এই তেলই রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করব।”