
শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনার চক্ষু হাসপাতাল গুলোতে দিনের পর দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস, ভেজাল খাদ্য, সামাজিক অস্থিরতা, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অপরিশোধিত পানি, কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া, ইন্টারনেটের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ চোখের দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ করার জন্য দায়ী। নগরীর শিববাড়ী এলাকায় ‘বাংলাদেশ আই হস্পিটাল’, রূপসার তিলকে ‘আব্দুল ওয়াদুদ রেভা: চক্ষু হাসপাতাল’, ‘খুলনা লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল’, ঘুরে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনা মহানগরীসহ আশপাশ এলাকায় একাধিক আই হস্পিটাল গড়ে উঠলেও রোগীর যেন কমতি নেই। চোখের বিভিন্ন রোগ নিয়ে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সী রোগী এসব চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।
মাত্র দুবছর আগে শিববাড়ি মজিদ স্মরনিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আই হসপিটালে এখন অসংখ্য রোগীর ভিড়। এখানে চোখের ছানি অপারেশন,ভিট্রুও রেটিনা সার্জারী, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, অকুলোপ্লাস্টিক সার্জারী, গøুকোমা ক্লিনিক, কর্নিয়া ক্লিনিক, ল্যাসিক, পেডিয়াট্রিক আই ক্লিনিক, ইউভিয়া ক্লিনিক, লেজার (সব ধরণের), থ্রিডি এবং টুডি ওসিটি, এনজিওগ্রাফি, কন্টাক লেন্সসহ সকল প্রকার উন্নত সেবা নিতে রোগী আসছেন। তবে এখানে ছানি পড়া রোগীর সংখ্যাই বেশী।
রূপসা উজেলার তিলকে অবস্থিত রেভা: আব্দুল ওয়াদুদ মেমোরিয়াল হাসপাতালে চোখের সমস্যাজনিত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ২০২০-২১ অর্থ বছরে (বহি:বিভাগ) ৩৩ হাজার ২৯৫ জন। এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৫১৯ ব্যাক্তির ছানি অপারেশন হয়। চোখের অন্যান্য রোগের অপারেশন হয় ১ হাজার ৬২২ জনের। তারা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করেন ৫ হাজার ৫২৩টি। তার আগের বছরের মে থেকে জুলাই পর্যন্ত বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ছিলেন ৮ হাজার ৬৫৪ জন। এ সময়ে ছানি অপারেশন রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২১২ জন। একই সময়ে ক্যাম্পের মাধ্যমে ৭৮০ জনের ছানি অপারেশন করা হয়। এর আাগে গত ২০১৯ সালে (বহি:বিভাগ) চোখের সমস্যাজনিত কারণে এখান থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় ৩০ হাজার ৫২৪ জনকে। এ সময়ে ছানি অপারেশন করা হয় ৭০৯ ও ক্যাম্পের মাধ্যমে ৫৩৯ জনের। প্রতি বছর চক্ষু রোগীর সংখ্যা এখানেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এখানে বহি:র্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয় প্রায় ৩৮ হাজার চক্ষুরোগীর। আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে করোনার কারণে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে।
হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা: মনোজ কুমার দাশ বলেন, করোনার কারণে আশপাশের বিভিন্ন চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন না করায় সে চাপ এখানে বেড়ে যায়। এখন সে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ফরমালিন যুক্ত খাবার, ডায়াবেটিকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত সবুজ গাছ পালা না থাকা, শিশু-কিশোর ও যুবকদের অধিক সময় আকাশ সংস্কৃতি বা ফেসবুক ব্যবহার এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া পরিসংখানে দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফরমালিনযুক্ত খাবারে বাজার সয়লাভ হওয়ার কারণে মানুষ এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারছে না। এ কারণে চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের মাথা ব্যথা এবং চোখে ছানি পড়া রোগ বেড়েই চলেছে। সম্পূরক খাবার না খাওয়া এবং সচেতনতার অভাবে এ সব রোগ বাড়ছে।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন চিকিৎসক জানান, জন্মের পর যেমন চোখের পর্দা পড়া, চোখ ট্যারা, এবং অ্যালার্জি জনিত কারণে অনেক মানুষ ক্ষীণ দৃষ্টিতে ভোগেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও স্বীকার করেন, অধিকাংশ সময় বাসাবাড়ি বা অফিসের বন্ধ পরিবেশে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় হচ্ছে বলে উন্নত সবুজায়ন দেখার সুযোগ মিলছে না।। ফলে চোখের নানা জটিলতায় চশমা ব্যাবহার করতে হচ্ছে। গ্রামের তুলনায় শহরের শিশুরা ক্ষীণ দৃষ্টি রোগে বেশী ভুগছে।
চিকিৎসাবিদরা বলছেন, চক্ষুরোগীর বেশিরভাগই বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার। কারণ শহরগুলোতে বিনোদনের জায়গার অভাব থাকায় ইন্টারনেট, ফেসবুক বা ভিডিও গেমসে দীর্ঘ সময় দৃষ্টি রাখছে। এমন অসচেতনতা, ঘরমুখী জীবন ব্যবস্থা এবং পড়াশোনাসহ নানা মানসিক চাপে থাকার কারণেও চোখের সমস্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ আই হসপিটালের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার জামান বলেন, পূর্বের তুলনায় মানুষ এখন যথেষ্ট স্বচেতন। আর্থিক সংগতিও বেড়েছে। এ কারণে চোখে কোন রকম সমস্যা মনে করলে তারা চিকিৎস্যার কথা ভাবেন। তারা হাসপাতাল অভিমুখি হয়। যে কারণে দিনে দিনে চোখের সমস্যাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ই চলেছে। তিনি বলেন, তাদের এখানে ছানি পড়া রোগীর সংখ্যাই বেশী।