প্রতি পিস ১০ টাকা
শেখ আব্দুল হামিদ : গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার বদ্বীপের সুন্দরবন বিশে^র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এ বনের ঐতিহ্য গোলপাতা। এ পাতার গোড়ায় জন্ম হয় কাঁধি-কাঁধি গোলফল। সেই গোলপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে সুন্দরবনের বিশ^খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানুষ এখন গোলফল কেটে খুলনা, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন লোকালয়ে বিক্রি করছে। নতুন ফল পেয়ে অপরিচিতদের মাঝে এর চাহিদা অনেক। গোলপাতা একপ্রকার পামজাতীয় উদ্ভিদ। সুন্দরবনঘেঁষা এলাকা ছাড়াও বাগেরহাট জেলা সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল ও চিতলমারি, খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা এলাকার নদী-নালা ও খাল-বিলের পাশেও গোলগাছ দেখা যায়। মূলত ঘর ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হয় এই গাছের পাতা। প্রথমত সুন্দরবনের আশপাশে বসবাসকারি মানুষের মাঝে গোলফল খাওয়ার প্রচলন ছিল।
বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের সাচিবুনিয়া বিশ^রোড চৌরাস্তা মোড়ে ভ্যানের ওপর গোলফল নিয়ে বসেছেন আব্দুর রহমান শেখ। বাগেরহাট ষাটগম্বজ এলাকায় তার বাড়ী। প্রথমে ষাটগম্বুজের পাশে বসেই বিভিন্ন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট গোলফল কেটে বিক্রি করতেন। প্রতি ফলের মূল্য ১০ টাকা। তিনি বলেন, প্রশাসনের চাপে এলাকা ছেড়ে বটিয়াঘাটায় এসেছি। তিনি বলেন, গ্যাংরিলে দুই পা পঙ্গু হওয়ার পর এখন গোলফল বিক্রি করে সংসার চলে। পরিবারে রয়েছে ছয়টি ছেলে-মেয়ে। প্রতিদিন ৪০-৫০ কাঁধি ফল বিক্রি হয়। কাঁধিতে ৫০-১৫০টি করে ফল থাকে।
আব্দুর রহমান সোৎসাহে বর্ণনা করে বলেন, “সুন্দরবনের গোলপাতা গাছের নাম শুনছেন তো? সেই গোলপাতার ফল এইটা। তালের শাঁসের চেয়েও পুষ্টিকর ফল। শরীরের নানান ব্যথা, ডায়বেটিস, চর্মরোগে ওষুধের কাজ করে গোলফল। খাইলেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। বাংলাদেশে আমিই এইটা বিক্রি উদ্বোধন করছি।”
ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান শেখ। প্রায় নয় বছর আগে গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে দুই পা হারান তিনি। পঙ্গু অবস্থায় ভ্যান টেনে ছয় ছেলে-মেয়েসহ সংসারের খরচ বহন করতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন তখনই এই গোলফল বিক্রির চিন্তা মাথায় আসে তার। বছর চারেক আগে ছোট ছেলেকে নিয়ে আশেপাশের এলাকার নদীর পাড়ে জন্মানো গোল গাছ থেকে ফলের কাঁদি কেটে এনে ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বিক্রি করতে শুরু করেন। লম্বায় তিন থেকে চার ইঞ্চি ফলগুলো দেখতে কিছুটা ছোট আকৃতির নারকেলের মতো। শক্ত খোসা কেটে অপরিপক্ক নরম আঁটিগুলোকে খাওয়া হয় ফল হিসেবে। সাদা রঙের আঁটিগুলো স্বাদে অনেকটা তালশাঁসের মতোই। ঘ্রাণ কিছুটা অন্যরকম। তিনি বলেন, প্রশাসনের তাড়ার কারণে বাগেরহাট ছেড়ে বটিয়াঘাটায় এসে বিক্রি করছি।
ঢাকা থেকে সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। এই ফল সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাচ্চাদের নতুন একটা ফলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলাম, তাই ভালো লাগছে। গোলপাতার নাম শুনলেও আগে কখনো এর ফলের কথা শুনিনি। খেতে তাল কিংবা নারকেল শাঁসের মতো অনেকটাই।”
বিষয়টি নিয়ে সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন থেকে গোলফল কেটে আনা সম্পূর্ণ বেআইনী। তবে ফল নিয়ে একবার লোকালয়ে চলে এলে ধরার নিয়ম নেই।