
ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিলো কম, দুই প্রার্থীর ভোট বর্জন
শেখ আব্দুল হামিদ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোটখাটো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া খুলনার ৬টি আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে এবার ভোটার উপস্থিতি ছিলো কম। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি বুথে এজেন্ট দেখা গেলেও সব বুথে অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্ট দেখা যায়নি। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের সামনে ভোটারদের কোনো দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি।
এদিকে, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলাকালে খুলনা-৫ আসনের একটি ভোটকেন্দ্র থেকে একজন ভুয়া পোলিং এজেন্টকে আটক এবং চুকনগর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের সামনে থেকে একটি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়।
দুপুর ১টার দিকে খুলনা-৪ আসনে আজগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্তজা রশিদী দারার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পরিস্থিতি বড় আকার ধারণ করার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ করেন। অপরদিকে, দুপুরে খুলনা-৩ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের কর্মী-সমর্থক ও কেসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিটনের বিরুদ্ধে তার কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মারধর এবং বাড়ি ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন। এছাড়া খুলনা-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক নানা অভিযোগে ভোট বর্জন করেন।
খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, ভোট চলাকালে জেলার ৬টি আসনের কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনে ৪৩ থেকে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোয়াশা মোড়ানো শীতের মধ্যে গতকাল রবিবার সকাল ৮টায় খুলনা জেলার ৬টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যাই ছিল বেশি।
খুলনা-২ আসনের নিরালা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুটি বুথে ভোট শুরুর পর পৌঁনে ১ ঘণ্টায় একটিও ভোট পড়েনি। কেন্দ্রের অন্য একটি বুথে একই সময়ের মধ্যে ভোট পড়ে মাত্র দুটি। কেন্দ্রটি নারী ভোটারদের জন্য ছিল সংরক্ষিত। এছাড়া ঐ কেন্দ্রের ৪ নম্বর বুথে ভোট পড়ে মাত্র একটি। এদিকে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জিলা স্কুল কেন্দ্র, পাইওনিয়ার স্কুল কেন্দ্র ও ফাতেমা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোটারদের বিরিয়ানির প্যাকেট দিতে দেখা যায়।
খুলনা-৩ আসনটি খুলনার শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হিসাবে খ্যাত। সকাল থেকেই এ আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম কামাল হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জামান সাথীর ছিল অনিয়মের নানান অভিযোগ। দুপুরে তিনি এস এম কামাল হোসেনের কর্মী-সমর্থক ও কেসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে তার কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মারধর এবং বাড়ি ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেন।
খুলনা-৪ আসনের কোনো কেন্দ্রেই ভোটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। এ আসনের দিঘলিয়া উপজেলার কেটলা হাজী ছায়েমউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় এ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৩১৭টি। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আরিফুর রহমান জানান, ভোট পড়ার শতকরা হার ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২৬৮টি।
তেরখাদা উপজেলার নেবুদিয়া জুনারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অপরাহ্ন সাড়ে ৩টায় গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-৪ আসনের এ কেন্দ্রে তখন পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৮৮টি।
খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের সামনে থেকে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে লাল স্কচটেপ জড়ানো ককটেল সদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়। এ সময় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা বিরাজময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে জিল্লুর নামে নৌকা প্রতীকের ভুয়া এক পোলিং এজেন্টকে আটক করা হয়। অপরদিকে, বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষে কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম উক্ত তিনটি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, উক্ত ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার খুলনা-১ ও খুলনা-৬ নম্বর আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য চারটি আসনের তুলনায় এ দুটি আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।