শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম এবং বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী, মধ্যস্বত্বভোগীদের তাণ্ডব।বর্তমানের সবচাইতে বড় সংকট জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। যতটুকু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, তার চাইতে বেশি প্রভাব এখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অতিলোভ এবং সুযোগ বুঝে কোপ বসানোর পুরোনো কৌশল।
বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এরকম পরিস্থিতি সব সময় কাজে লাগায়। ভোগান্তির শিকার হয় নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই হয়েছে এখানে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির নীতি আগুনে ঘি ঢালার মতন কাজ করেছে। শিল্পপতি, বড়বড় আমদানিকারক, মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য খোলা মাঠে গোল দেয়ার মতন অবস্থা। বলা নাই কওয়া নাই সাইসাই করে জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। লাগাম টেনে ধরাটা অসম্ভব মনে হচ্ছে।
বাজেট কমিয়ে, সপ্তাহে একবার মাংসের বদলে মাসে একবার খেয়ে, বাজারে একটু সাশ্রয়ী দামের জিনিস খুঁজে ক্রয় করাটা নিত্য দিনের রুটিনে রূপ নিয়েছে। আমি নিজেও সেটি করছি। না করে উপায়ও নাই। প্রয়াত অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান ওনার পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ে লিখেছেন "আধুনিক রাষ্ট্রের ভাগ্যবিধাতা শাসকরাও নয়, জনগনও নয়। রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ স্বার্থের গোষ্ঠীসমূহ। এরা উৎপাদন বাড়াতে চায় না, বন্টন ব্যবস্থায় নিজেদের বখরা বড় করতে চায়। এদের মধ্যে আছে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের জোট, পেশাদারদের সমিতি, কর্মচারি ও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন। যে কোন সংস্কার প্রবর্তিত হলে কোন না কোন বন্টনমূলক জোটের স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়।"
সেদিন একটি টেলিভিশনে কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলছিলেন, দাম বাড়ায় আমাদের হাত নাই। গোড়াঘাটে হাত দেন। যারা বড় বড় ব্যবসায়ী তাদের জিজ্ঞাসা করেন।সমস্যাটা ওখানে। সে বড় ব্যবসায়ীরা এদেশে বর্ণচোরা বা সাধুবেশি। যে কোন মূল্যে ক্ষমতার কাছে থাকেন তারা৷ তাই তাদের কাছে প্রশ্ন করতে করতে সাধারণ মানুষের পকেট গড়ের মাঠ।
সুযোগ বুঝে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে যায় কয়েকদিনের ব্যবধানে। সামনে আসছে রমজান মাস। জিনিসপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আর সে সুযোগে আরো কয়েকধাপ দাম বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের। যতই বলা হোক দাম বাড়বেনা। এটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেনা। কারণ রাঘববোয়াল ব্যবসায়ীদের লোভাতুর জিহবা বেশ লম্বা।
যাই হোক, মূল কথায় আসি। এই মুহুর্তে বাজার ব্যবস্থায় ব্যপক সংস্কার অত্যাবশকীয়। যেটির রিস্ক আপাততদৃষ্টিতে সরকার নেবেনা। কারণ বড় শিল্পপতিদের ক্ষেপিয়ে তুললে সরকারেরই সংস্কার করে ফেলতে পারে তারা। কিন্তু জনগনের পিঠ দেয়ালে ঠাসা।
অন্যদিকে কৃষকের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। উৎপাদন খরচ বাড়তি। জমিনের ফসলের দাম তেমন নাই। ফসল জমিন থেকে বিক্রি হয়ে স্থানীয় জেলার বাজারে আসলেই দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুন। রাজধানীতে আসলে সেটির দাম হয়ে যাচ্ছে তিন চার গুণ। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বেশিরভাগই উৎপাদন হচ্ছে দেশের মাটিতেই। আমদানিকৃত পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলেও, স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের বাজার ব্যবস্থা ঠিক রাখা কঠিন কিছু নয়।
সরকারিভাবে অর্থের বিনিময়ে কৃষকের পণ্য পরিবহন সুযোগ, অথবা স্থানীয় কালেকশন পয়েন্ট থেকে সরকারিভাবে পন্য ক্রয় করে শহরে এনে ন্যায্য মূল্যে সরবারাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অর্থনীতিবিদদের থিওরিতে সেটি হয়তো ভালো নাও হতে পারে, কিন্তু এই অবস্থায় সেটি বাজার ব্যবস্থা সংস্কারের একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত