গত বছরের তুলনায় বৃষ্টি ৭৫ শতাংশ কম
মামুন খান
চলতি আষাঢ় মাসে খুলনায় স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এবার আষাঢ়ের ২০ দিনে গত বছরের তুলনায় ৩শ’ ৭৮ মিলিমিটার কম বর্ষণ হয়েছে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাবে আমন চাষীরা বীজতলা তৈরির কাজে বেগ পাচ্ছেন। তারা পর্যাপ্ত বর্ষার জন্য প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন।
এদিকে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমন আবাদ পুরোদমে শুরু হতে দেরি হচ্ছে বলে স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছেন- বিলম্বে রোপন জনিত কারণে আলোক সংবেদনশীল কয়েকটি জাতের ধানে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
গত বছর পহেলা আষাঢ় থেকে ২০ আষাঢ় পর্যন্ত ৫শ’ ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বর্ষাকালে এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয়েছে-মাত্র ১শ’ ২৫ মিলিমিটার। যা গতবারের তুলনায় ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ কম। গত আষাঢ়ে কোনো-কোনো দিন ৭০/৮০/৯০ মিলিমিটার বর্ষণ হয়েছে। এবারের চিত্র ভিন্ন, একদিনে সর্বোচ্চ ৩৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তা কম থাকায় এবং কোনো প্রকার নি¤œচাপ কিংবা লঘুচাপ সৃষ্টি না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন স্থানের কয়েকজন কৃষক বলেছেন, আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই তারা বীজতলা তৈরির জন্য জমি চাষ শুরু করেন। কিন্তু এ বছর আষাঢ় মাস শেষ হতে চললেও জমিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টির পানি জমে নি। চাষের জন্য জমিতে ট্রাক্টরও নামানো হয়নি। অথচ এমন সময় বীজতলার চারার বয়স এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন থাকার কথা ছিল। যদিও বিভিন্ন স্থানের নিচু জমিতে গত সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে বীজতলা তৈরি হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নয় উপজেলাসহ মেট্রো অঞ্চলের দু’টি থানা এলাকায় এবার ৯৩ হাজার ১শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ওই জমিতে রোপনের জন্য চার হাজার ৯শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির টার্গেট রয়েছে। কিন্তু, সোমবার পর্যন্ত পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাত্র ৬ থেকে ৭ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে।
রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের পুটিমারী বিলে চারটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক আমন আবাদ করেন। বিলের সামান্য জমিতে রোপনের জন্য কিছু স্থানে বীজতলা তৈরি হলেও বেশিরভাগ অংশের জন্য এখনও জমি চাষের ট্রাক্টরই নামানো হয়নি। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনকালে এ দৃশ্য চোঁখে পড়েছে।
সেখানকার যুগিহাটী গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ মোল্লা বাবু (৪২) বলেন, তিন থেকে চার একর জমিতে রোপনের জন্য অন্তত ১৫ কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। কিন্তু জমিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টির পানি না জমায় চাষ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন সময় বীজতলার চারার বয়স অন্তত সাত দিন থাকার কথা ছিল। তার মতো অনেকেই পর্যাপ্ত বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন। দেরিতে আবাদ করা হলে ফলন কম হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তেরখাদা উপজেলার মোকামপুর গ্রামের কৃষক মোঃ আনিছুর রহমান (৪৫) বলেন, স্থানীয় বাশুয়াখালী বিলে ১৮ থেকে ২০ টি গ্রামের চাষীরা আমন আবাদ করেন। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাবে এ মৌসুমে বিলের অর্ধেক জমির কৃষকই এখনও বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। যদিও গত দু’-তিন দিন আগে কিছু জমিতে বীজতলা তৈরির জন্য চাষ হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয় থাকলে এবং আকাশে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হলে সাধারণত উপক‚ল এলাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু চলতি আষাঢ়ে দু’-এক দিন বাদে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু মাঝারি মানের সক্রিয় অবস্থায় বিরাজ করছে। আগামী দু’-তিন দিন পর মৌসুমী বায়ু প্রবল সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।