- বিনা বেতনে কাজ করছে শিক্ষকরা
- অনলাইন পাঠদানে অনীহা
এম সাইফুল ইসলাম গোবরচাকা অ্যামিটি চাইল্ড হ্যাভেন স্কুল। ২০১৬ সালে এই কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২০ সালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর খোজ নেই। তবে করোনার কারণে ক্লাস-পরীক্ষা নেই। এ বছর কোন শিক্ষার্থী ভর্তি নেই। ফলে চলছে না কিন্ডারগার্টেনটির কার্যক্রম। কিন্ডারগার্টেনের মালিক মোঃ আশরাফুল ইসলাম কিছুদিন জিবীকা নির্বাহ করেছে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করে। বর্তমানে বিকল্প পেশার কথা ভাবছে।
উধাও হয়ে গেছে মোল্লাবাড়ির মোড়ের স্কলার কিন্ডারগার্টেন। স্কুল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে সাইনবোর্ড। পরিচালকের মোবাইলে কল করলে দেখা যায় নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে।
অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনিহা থাকায় এসব শিক্ষার্থীর থেকে বেতন আদায়ও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শ্রম দেয়ার পরও শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, নগরীর সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো এভাবেই অস্তিত্বের লড়াই করছে।
করেনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। টানা প্রায় এক বছর চার মাস বন্ধ । - স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের পরামর্শ
- সৃজনশীলতার প্রয়োগের পরামর্শ
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘর ভাড়া ও বেতন দিতে পারছেন না মালিকরা। যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিক্রি হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানের চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। ঝরে পড়ছে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। খুব দ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু না করলে খুলনার শিক্ষাখাতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, খুলনায় জেলায় করোনার আগে সচল ছিল তিন শতাধিক কিন্ডারগার্টেন । এর মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে পতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেকের মোবাইলও বন্ধ। করোনার প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান সচল না থাকায় মালিকরা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। নগরীতে মোটা অংকের বাড়ি ভাড়া ও প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের বেতন দিতে না পারায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ঋণের বোঝা টানতে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক বিকল্প পেশা হিসেবে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি সহ একাধিক বিকল্প পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে । এছাড়া প্রতিষ্ঠানের স্টাফরা বেতন না পেয়ে চলে গেছেন নিজ-নিজ গ্রামের বাড়ি।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক শিক্ষক জানান, শিক্ষিত হয়েও কোন লাভ নেই। প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে না পারায় পরিবার নিয়ে হতাশায় তারা। তাই বিকল্প পেশার কথা ভাবছেন তিনি।
জেলায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের একাধীক গ্রুপ রয়েছে। সব মিলিয়ে এসোসিয়েশনের অন্তর্ভুক্ত ছিল ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন প্রায় ৬ হাজার স্টাফ। ভর্তি ছিল প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।
॥ বিনা বেতনে কাজ করছেন শিক্ষকরা ॥
কিন্ডারগার্টেনগুলোর ৬০-৭০ ভাগই নারী শিক্ষক। সোমবার একটি কিন্ডারগার্টেনে দেখা যায়, সেখানে ৪ জন শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ক্লাস বন্ধ থাকলেও আমাদের বিদ্যালয় খুলে বসে থাকতে হয়। তবে দীর্ঘ ১৪ মাসেও বেতন পাচ্ছেন না তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, বেতন যে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না তা কিন্তু নয়। ৩০ ভাগ শিক্ষার্থীর থেকে বেতন পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা দিয়েই বিদ্যালয় ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হচ্ছে।
॥ অনলাইন ক্লাসে নেই শিক্ষার্থী উপস্থিতি ॥
করোনাকালীন সময় বেশ কিছু স্কুল অনলাইনে পাঠ কার্যক্রম শুরু করলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা বলছেন, অনলাইনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী নয়। অনেক অভিভাবক বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিতে চান না। এছাড়াও আরো একটি সমস্যা আছে সেটি হলো শিক্ষকের সম্মানী। শিক্ষক একটি ক্লাস করালেই তাকে সম্মানী দিতে হয়। এই অবস্থায় সেটি সম্ভব না হওয়ায় অনলাইন পাঠ কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।
সৃষ্টি সেন্ট্রাল স্কুলের খুলনা শাখার প্রিন্সিপাল ফয়সাল কুদ্দুস বলেন, আমরা করোনাকালের শুরু থেকে-ই আমরা অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছি। এখানে সকল শ্ষিার্থীরা-ই অংশগ্রহণ করছেন। তবে বিপথগামির আশংকায় অভিবাবকদের কিছুটা আশংকা থাকলেও মেনে নিতে হচ্চে তাদের।
চিলড্রেন ভয়েস স্কুলের প্রিন্সিপাল জানান, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা আগামির তরুন প্রজন্মকে বিপদেও মুখে ফেলতে পারি না। তাই আমরা অনলাইনে ক্লাস থেকে বিরত রয়েছি। এর বিকল্প হিসেবে বিশেষ পদ্ধতিতে সৃজনশীলতার ওপরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। যা খুব-ই কার্যকর পদ্ধতি। তবে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত অনলাইনে কøাস নি”্ছ।ি এ ক্লাসগুলো নেয়ার সময়ে তাদের অভিবাকরা সাতে যুক্ত থাকেন ফলে বিপদগামি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
॥ প্রতিষ্ঠান না খুললে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব ॥
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মোঃ আতিকুর রহমান রুম্মান জানান, স্কুলগুলো যেভাবে সংকটে রয়েছে তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগই আপাতভাবে দেখা যাচ্ছে না। তবে যদি সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়, তবেই বিদ্যালয়গুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আবারো আগের মতো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এসোসিয়েশনের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে ৬০-৭০টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণ করে চলা যাদের পক্ষে সম্ভব তারা এখনও টিকে আছে। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে আরও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিনা অসিকুর রহমান দোলন বলেন, ‘এমন অবস্থা চলতে থাকলে ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। পরিচালকরা পথে বসবে। কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, করোনার প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়গুলো।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল হাসান তুহিন বলেন, কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা সরকারের প্রণোদনা পায়নি। তাই অনেকের পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, খুব দ্রুত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো চালুর উদ্যোগ না নিলে শিক্ষাখাতে ভয়াবহ খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হবে।
খুলনায় করোনাকালে কিন্ডারগার্টেন: অস্তিত্বের লড়াইয়ে শিক্ষক কর্মচারি ও মালিকরা
Leave a comment