দুই তৃতীয়াংশ বেড ফাঁকা
অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংকে তালা
শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনার পাঁচ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। সে কারণে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের দিন ভালো যাচ্ছে না। যদিও দুই-তিন দিন আগে তাদের দাপট ছিল অসহনীয়। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভাড়া, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এবং ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের আশপাশে পড়ে আছে করোনাকালীন হঠাৎ গড়ে ওঠা শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত এপ্রিল-মে মাসে নগরীতে সহ¯্রাধিক এম্বুলেন্স ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বহু মাইক্রোকার রাতারাতি অ্যাম্বুলেন্স হয়ে যায়। শুধুমাত্র গায়ে অ্যাম্বুলেন্স লিখে এবং সিট পাল্টিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে করোনা রোগী পরিবহন শুরু করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেই গড়ে ওঠে অ্যাম্বুলেন্স সমিতি। সমিতির আওতাভুক্ত না হলে হাসপাতালে সীমানায় তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। মুমূর্ষু রোগীদের পরিবহনের নামে তারা ইচ্ছামত অর্থ আদায় করেছে। নগরীরর বিভিন্ন রাস্তায় দাপিয়ে চলেছে সরকারি-বেসরকারি নামে বেনামে বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স। সাধারণ রোগীরা তাদের হাতে ছিল জিম্মি। করোনা পরিস্থিতি শেষের পথে আসায় এসব নামধারী অ্যম্বুলেন্স এখন ব্যবসা গুটাতে শুরু করেছে।
খুলনার তিন সরকারি ও দুই বেসরকারি হাসপাতালে ফাঁকা পড়ে আছে দুই তৃতীয়াংশ বেড এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। করোনা চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্যরা যেন দীর্ঘদিন যুদ্ধের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। আইসিইউ, এইচডিইউ বেডগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে আছে। এসব ওয়ার্ডে মূমূর্ষু রোগীর আর্তনাদে এখন আর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে না। জেলা ও উপজেলার অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক গেটে তালা ঝুলছে। সিলিন্ডার পড়ে আছে ব্যাংকের ভিতরে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত ২০২০ সালে করোনা শুরু হলে কয়েক মাস পর তিনি তার মালিকের নির্দেশে মাইক্রোকারটি অ্যাম্বুলেন্স করেন। নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এবং অন্যান্য জেলা থেকে রোগী পরিবহন করেন। নভেম্বর মাসের দিকে আবার মাইক্রোকার হিসেবে যাত্রী পরিবহন চলে। এবারও সেই একই পরিস্থিতি হয়েছে। তার উপর নির্ভর করে আরও দুজন কর্মচারী রয়েছে। তাদের এখন ছেড়ে দিতে হবে।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, করোনার মত মহামারী ঘাতক ব্যাধি কমে আসায় সর্বত্র স্বস্তি ফিরে আসছে। এ ব্যাধির উপর নির্ভর করে যারা অবৈধ ব্যবসা করেছে তারা এখন বিপাকে রয়েছে। তবে মানুষকে সচেতন হয়ে চলতে হবে। বিগত দিনের কথা মনে রেখে নিজের সুরক্ষা নিজকেই বজায় রাখতে হবে। তানাহলে আবারও অনাকাংখিত ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে।
খুলনা অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় নগরীর পাঁচটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটের প্রায় চার ভাগের তিন ভাগ বেড এখন খালি পড়ে আছে। কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নগরী খুলনায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তিনটি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি দুটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হয়। এই পাঁচটি হাসপাতালে মোট ৫৬৫ টি বেডের ব্যবস্থা থাকলেও এক পর্যায়ে করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু সম্প্রতি অনেকটা বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। মঙ্গলবার সকালে পাঁচটি হাসপাতালের ৫৬৫ টি বেডে মোট রোগী আছে ১৪৯ জন। ফলে অধিকাংশ বেড় এখন খালি পড়ে থাকছে।
সূত্রটি আরও জানায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত ২০০ বেডের করোনা ডেডিকেটেড হাসাপাতালে এখন রোগী ভর্তি রয়েছে ৭৮ জন। অথচ কিছুদিন আগেও সেখানে বেডে স্থান না পেয়ে ফ্লোরে করোনা রোগীদের থাকতে হয়েছে। একইভাবে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৪৫ বেডের মধ্যে খালি আছে ২০ টি। খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৮০ বেডের মধ্যে রোগী আছে মাত্র ০৫ জন।
অন্যদিকে বেসরকারি খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৫০ বেডের মধ্যে এখন রোগী আছে ১২ জন। আর সিটি মেডিকেলে ৯০ বেডে আছে ২৯ জন।
করোনা রোগী কমার সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বিগত তিন মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মহানগরীর ৫টি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি ২৩ আগস্টের প্রতিবেদনে। এর আগে চলতি বছরের ২৫ মে খুলনা করোনা হাসপাতালগুলোতে করোনায় মৃত্যু শূন্য ছিল। আর মঙ্গলবার ২৪ আগস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী নগরীর পাঁচ হাসপাতালে মারা গেছে একজন।