# ভাইরাসে বেঁকে যাচ্ছে
# খরায় ওজন বাড়ছে না
শেখ আব্দুল হামিদ
খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা, ডুমুরিয়া, রূপসা ও পাইকগাছা উপজেলায় বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে চলতি মৌসুমে তরমুজের চাষ হয়েছে। তীব্র রোদ, পানির অভাব ও বিষের প্রভাবে ক্ষেতে মৌমাছি না আশায় পরাগায়নের অভাবে তরমুজের ফলন কম হয়েছে। প্রতিদিন চাষীরা কৃত্রিম ভাবে পরাগায়ন করে তরমুজের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। গত কয়েক মাস বৃষ্টি না হওয়ায় এবং স্থানীয় পানির উৎস নদী খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পনি সংকট দেখা দিয়েছে। গাছের ফল শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে, তরমুজও বেঁকে যাচ্ছে। এ নিয়ে তরমুজ চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় এবার তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের চাষ হয়। ২০১৪ সালে জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়। সে বছর জেলায় ৩ হাজার ৪৬৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ হয়েছিল। তবে সে বছর ফসল তোলার সময় প্রচন্ড বৃষ্টি ও খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে ২০১৫-১৬ সালে তরমুজের আবাদ কম হয়। ২০১৭ সাল থেকে তরমুজের আবাদ আবার বাড়তে থাকে। গত বছর ২ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২০ হাজার টন তরমুজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে, যার ৭২ শতাংশ হয়েছে দাকোপ উপজেলায়।
তরমুজ গাছ ব্যাপক হলেও ফুলে পরাগায়ন নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। তরমুজ ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে কিটনাশক ব্যবহার করা হয়। আর এ কারণে ক্ষেতে মৌমাছি আসছে না। পরাগায়ন করতে এসে বহু মৌমাছির প্রাণ যায়। পরাগায়ন ঠিকমত না হওয়ায় গাছে ফলন কম দেখা দিয়েছে। চাষিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিদিন নিজেরাই কঠিন রোদের মাঝে ক্ষেতে নেমে পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করছেন। একাছে বেশী ভূমিকা পালন করছেন গৃহবধুরা। তারা স্বযত্বে এ ফুল থেকে পরাগ নিয়ে অন্য ফুলে লাগিয়ে দিচ্ছেন। বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ঝড়ভাঙ্গা গ্রামের কৃষক মৃত্যুঞ্জয় রায় জানান, তিনি প্রতিবছরই তরমুজ চাষ করে থাকেন। তবে এ বছর কোন ক্ষেতেই মৌমাছির আনাগোনা নেই। যে কারণে বাড়ির মেয়েরা বিলে নেমে সারাদিন ক্ষেতে বসে পরাগায়নের কাজে ব্যস্ত থাকে। এবার বহু কষ্ট করেই তরমুজ উৎপাদনের চেষ্ট চলছে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: হাফিজুর রহমান বলেন, জেলায় চলতি বছর তরমুজের চাষ ভালো হয়েছে। যেসব এলাকায় দেরিতে চাষ হয়েছে, সেখানে সবে তরমুজ উঠতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ক্ষেতে চাষিরা অনেক সময় না বুঝে মাত্রতিরিক্ত কিটনাশক প্রয়োগ করেন। একারণে মৌমাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ ক্ষেতের কাছে আসে না। তারা গন্ধ বুঝে সরে যায়। তাই পরাগায়নে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টি স্বল্পতার কারণে ক্ষেতে প্রচুর পানি দেয়া লাগছে। পরিচর্যা ঠিকমত না হলে ভাইরাস লাগতে পারে। তখন তরমুজের সাইজ ঠিক থাকে না। তবে খুব একটা সমস্যা হবে না।
খুলনায় তরমুজ ক্ষেতে মৌমাছি নেই
Leave a comment