শেখ আব্দুল হামিদ
রোজার মাসে বৈশাখের রুদ্রতায় তীব্র গরমে তরমুজের কেজি ৫০ টাকা হলেও এখন তার মূল্য তিন টাকা। কৃষকের ক্ষেতে জমা হয়ে আছে তরমুজ আর বাঙ্গী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক প্রবেশ করছে এলাকায়। পানির দরে তরমুজ নিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন মোকামে। আগাম যারা তরমুজের চাষ করেছিলেন তারাই লাভবান। বাকী কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। সোমবার খুলনার কদমতলা আড়তে ১০ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয় মাত্র ৩০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজির মূল্য পড়ে মাত্র তিন টাকা। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যেই তরমুজের পিচ পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা পিচ হিসেবে তরমুজ কিনে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। অনেকে ভ্যানের উপর নিয়ে ফেরি করে চলেছেন। তরমুজ এখন সকল শ্রেণি পেশার ভোক্তাদের নাগালের মধ্যেই আছে। গ্রামের রাস্তার পাশে তরমুজ ভাংগীর স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিক্রির আশায়। ট্রাক যোগে ব্যবসায়ীরা এলে তাদের হাতে অল্পমূল্যে তুলে দেয়া হচ্ছে। একগিকে পঁচে যাবার শঙ্কা অন্যদিকে বড় ধরণের লোকসানের সম্ভাবনা চাষিদের চিন্তায় ফেলেছে।
রোজার আগে থেকেই বাজারে তরমুজ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। রোজা শুরু হওয়ার পরেই তরমুজের দাম কেজিতে বেড়ে যায় প্রায় ২০ টাকা। বাজারে তখন দুই ধরনের তরমুজ পাওয়া গেছে। ১০ কেজির নিচে মাঝারি আকারের তরমুজের দাম হাঁকা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, আর ১০ কেজির ওপরের তরমুজের দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি।
খুলনার বাজারে এখন আর আগেরমত তরমুজের দাম নেই। তরমুজ চাষী বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামের সুব্রত মন্ডল বলেন, ক্ষেতে তরমুজে পঁচন ধরার ভয়ে ট্রাক ভাড়া করে খুলনার কদমতলা বাজারে প্রায় দেড় হাজার পিচ নিয়ে যাওয়া হয়। পাইকার ক্রেতারা ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের তরমুজ মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকা পিচ দিয়েছে। গ্রামের বহু ক্ষেতে তরমুজ এখনও পড়ে আছে। বৃষ্টি হলে তরমুজ এবং বাংগীতে পঁচন ধরবে। তখন সব ক্ষেতেই নষ্ট হবে।
গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের ঝড়ভাঙ্গা গ্রামের তরমুজ চাষী মৃত্যুঞ্জয় রায় বলেন, প্রায় তিন বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়। ক্ষেতে তরমুজও হয়েছে ভালে। তবে দাম না থাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে না। ক্ষেতেই পড়ে আছে। দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের চাষী অরূপ কুমার মন্ডল জানান, তিনি প্রথম দিকে প্রতি কেজি তরমুজ ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ বছর তিনি ৮০ শতক জমিতে তরমুজের চাষ করেন। সে হিসেবে পাঁচ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম ৫০ টাকা। ক্ষেত থেকে নিয়ে পাইকাড়রা পাঁচ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রেতারা সেই তরমুজ বিক্রি করেন ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ফলে চাষিরা দাম পায় কম। এখন তরমুজ ক্ষেতেই পড়ে আছে। বিক্রি হচ্ছে না।
খুলনার সন্ধ্যা বাজারে তরমুজ কিনতে আসা ক্রেতা নামজা সুলতানা বলেন, রোজার আগে এবং রোজার সময় তরমুজের দাম এতবেশী ছিল যে কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখন মাত্র ১৫ টাকায় তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। তাই একটু বেশী করেই কিনেছি।
খুলনার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: হাফিজুর রহমান জানান, চলতি বছর তরমুজের উৎপাদন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো। এ বছর জেলায় ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে, যার ৭২ শতাংশ হয়েছে দাকোপ উপজেলায়। গাড়ি ভাড়া বেশীর কারণে রোজার ভিতর দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া ওই সময় চাহিদাও ছিল বেশী। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হেক্টরপ্রতি গড়ে ৫০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। তবে বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে এসেছে। যেসব চাষী আগে বিক্রি করতে পেরেছেন তারা লাভবান। তবে পরে যারা বিক্রি করছেন তারা লাভ বেশী করতে না পারলেও লোকসান হয়নি। তিনি বলেন, একবিঘা জমিতে তরমুজ লাগাতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। আর সে ক্ষেত বিক্রি হয়ছে ৭০ হাজার টাকায়।
খুলনায় তরমুজ খাচ্ছে ছাগলে
Leave a comment