
খুলনা মহানগরী ও এর আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কারখানার দূষণে সেখানকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন মোড়লপাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় গত মাস ছয়েক আগে একটি প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে পণ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানার কেমিকেল পোড়া গ্যাসের ধোঁয়ায় ৬০ থেকে ৭০ টি পরিবার চরম দুর্বিসহ সময় পার করছেন বলে ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিযোগ করেছেন।
সূত্রগুলো জানান, প্রায় ২৪ ঘন্টায় কারখানাটি চালু থাকে। যার যন্ত্রাংশের বিকট শব্দে অসহনীয় ভোগান্তি হচ্ছে। পোড়া গন্ধ সবসময় নাকে লেগে থাকে। সর্দি-কাশি ও খাদ্যে অরুচি ভোগাচ্ছে তাদের। শিশু এবং বৃদ্ধদের বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। গাছ-পালার পাতার উপর মোটা কালির স্তর পড়ে যাচ্ছে।
কারখানার সীমানার কয়েক গজ দূরত্বের একটি পরিবারের জনৈক বাসিন্দা বলেন, কারখানার কেমিকেল থেকে আগুন লাগলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়বে। আশপাশের বাসিন্দারা আক্রান্ত হবেন। অগ্নি দুর্ঘটনার শঙ্কায় তার মতো আরও কয়েকটি পরিবারের দিন কাটছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে কারখানার কোথাও কোনো নাম লেখা দেখা যায়নি। এর পাশর্^বর্তী স্থানে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যরে বস্তাজাত এবং খোলা অবস্থায় থাকা স্তুপ চোখে পড়েছে। সেটি একটি প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিন ফ্যাক্টরি। যেখানে শ্যাম্পু, ওষুধ, কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন তরল খাদ্য পণ্যের প্লাস্টিকের বোতল এবং প্লাস্টিকের নানা পণ্যের ভাঙ্গা-চোরা অংশের বস্তাজাত ও খোলা অবস্থায় থাকা স্তুপ রয়েছে। যেগুলো পরিষ্কার করার পর কেটে টুকরো-টুকরো করে প্লাস্টিক দ্রব্য উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে। সেখানকার শিশি-বোতল পরিষ্কারে ব্যবহৃত পানি রাসায়নিক মিশ্রিত হয়ে আশ-পাশের জলাশয়ে যাচ্ছে। এতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ওয়ান টাইম কাপ, গøাস, প্লেট ও সুতা তৈরি করা কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রমের সময় সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং কার্বন মনো অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে। যা বাতাসের সাথে মিশে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করছে।
আড়ংঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় এরকম আরও চার-পাঁচটি কারখানা রয়েছে। নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি, ফুলবাড়িগেট ও গেরিশন এলাকায়, খালিশপুর থানার গোয়ালখালি এলাকায়, হরিনটানা থানাধীন মোস্তর মোড় কৈয়াবাজার এলাকায়, সোনাডাঙ্গা থানার গল্লামারি বাইপাস এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অর্ধ শতাধিক অবৈধ কারখানা গড়ে উঠেছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, মানুষের ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া কোমল পানীয়, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের বোতল, প্লাস্টিকের পণ্যের ভাঙ্গা অংশ কিছু মানুষ কুড়িয়ে ভাঙ্গাড়ির দোকানে বিক্রি করছেন। ফেরিওয়ালারা গ্রাম-শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পেঁয়াজ-আলুসহ নানা পণ্যের বিনিময়ে প্লাস্টিকের বর্জ্য সংগ্রহ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। এরপর সেগুলো বস্তাজাত করে প্লাস্টিক থেকে পণ্য উৎপাদন এবং প্লাস্টিক রিসাইক্লিন করখানায় সরবরাহ হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আসিফুর রহমান দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে অবৈধ ওই সব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান জেনে অভিযান চালানো সহজ হয়। গত রাত ৯ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্ম সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বলে মন্তব্য করে বলেছেন, অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।