জন্মভূমি ডেস্ক
গত ৯ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১২ বছর পর কোনো সম্মেলন ছাড়াই খুলনা মহানগর জেলা বিএনপির ৩ সদস্য বিশিষ্ট করে কেন্দ্র থেকে আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়েছে। খুলনায় বিএনপির বিবাদমান দুটি গ্রæপ দীর্ঘদিন ধরে পৃথক কর্মসূচি পালন করে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার কমিটি ঘোষণায় দীর্ঘদিন পদে থাকা সদ্য বিলুপ্তি কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা কাঙ্খিত পদ পাননি। তার অনুসারীরা ছিলেন হতাশ। অবশেষে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এছাড়া শিগগিরই একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে তার এবং তার অনুসারীদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। বিএনপি নেতা মঞ্জুর ফেসবুকে পোস্ট করা বক্তব্য ও সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন জনের মতামত তুলে ধরা হলো:
আমরা স্তম্বিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা অযোগ্য ঘোষিত হলাম। কিন্তু কেন ? গতকাল ঘোষিত কমিটিতে যাদের আনা হয়েছে তারা কি আমাদের চেয়ে যোগ্য? আন্দোলন সংগ্রাম, মানবতার সেবায় ও হাজারো কর্মসূচি পালনে আমাদের অযোগ্যতা কোথায়? সারা দেশে বিএনপির রাজনীতি চর্চায় অন্যতম মডেল খুলনা মহানগর বিএনপি কেন আক্রমণের শিকার ? সারাদেশ খুলনার দিকে তাকিয়ে থাকে যে খুলনায় বিএনপি কর্মীরা যে কোন সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে তাইতো খুলনা বিএনপি সকলের সেরা।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
স্টাটাসে তিনি আরও লিখেন, বিএনপিকে নিয়ে দলের এ অবহেলা কেন ? যারা দল প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে ৪৪ দিন খুলনায় আসেনি, থাকেনি দল ও দলের নেতা কর্মীদের পাশে, তিনটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের কোন ভ‚মিকা ছিলোনা, পড়েনি কখনো মিথ্যা মামলায়, থাকেনি আহত কর্মীর পাশে, পড়েনি জানাজা ছিলোনা দাফনে ও আহত কর্মীর চিকিৎসা সেবায়। যারা এই শহরের পাঁচটা রাস্তার নাম জানেনা, বলতে পারবেনা পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, পাঁচজন খ্যাতনামা ডাক্তারের নাম, পাঁচজন গুণীজনের নাম, পাঁচজন শিক্ষাবিদের নাম। যারা মাঠের কর্মীদের চেনেনা যারা নির্বাচন করতে এসে বিএনপি অফিস চিনেছে আদালত পাড়া ও হাসপাতাল। দুই দফা করোনাকালে যাদের জনগণ পাশে পায়নি তারা চায় খুলনা বিএনপির কর্তৃত্ব, ধিক তাদের প্রতি।
দু:শাসনের ১২ বছরে দেশনেত্রীকে নিয়ে তিনটি মহাসমাবেশ লংমাচ ‘রোড মাচ’ গণঅবস্থান গণঅনশন রাজপথ রেল পথ ঘেরাও হরতাল অবরোধে কি কখনো তারা দলের পাশে কর্মীর পাশো ছিলো ? তাহলে কেন তাদের প্রেক্রিপশনে দল গঠিত হবে ? কেন রাজপথের ত্যাগী নেতা কর্মীরা অবমূল্যায়িত হবে এ প্রশ্ন সবার।
গত চার বছর তাদের হাতে গড়া যুবদল সেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্র দল পরিপূর্ণতা পায়নি, গড়ে ওঠেনি মাঠের সংগঠনে, হয়েছে বিভক্তি, বেড়েছে অসন্তোষ, গড়েছে ব্যক্তির সমর্থক গোষ্ঠি।
দল গঠনে নেতৃত্বে প্রাধান্য পেয়েছে শহরের বড় ছিনতাইকারী, কর্মীর খুনীর সহযোগী, মাদককারবারী, মটর সাইকেল চোর, ক্লাব পাড়ার মাতাল জুয়াড়ী।
পদবঞ্চিত হয়েছে আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভ‚মিকা পালনকারীরা, সাবেক ছাত্রনেতা মরহুম এসএম কামালের মত রাজপথের সাহসী নেতৃত্বকে পদহীন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তার মৃত্যুর পর কতিপয় ব্যক্তির মায়া কান্না ও অভিনয় দেখেছে দলের নেতা কমীরা ও জনগণ।
গত চার বছর ঢাকায় বসেছে দুই নেতার নানা ষড়যন্ত্রের বৈঠক, ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক নেতা কর্মীকে বলা হয়েছে মঞ্জু-মনির সাথে থাকলে পদ পাওয় যাবেনা, বিকল্প বিএনপি তৈরী করে প্যারালাল কর্মসূচি পালনের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, এ জন্য চালু করা হয়েছে টোপের রাজনীতি।
৪৪ বছরে গড়ে ওঠা আমাদের ঐতিহ্যের সংগঠন আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণশক্তি কর্মীগড়ার সংগঠন আমাদের গর্বের অহংকারের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে দুর্বৃত্বদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হেয়েছে কলুশিত করা হয়েছে ছাত্র রাজনীতিকে। ৪৪ বছরে তৈরী করা আমাদের কর্মীদের বিপথগামী করা ও আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু পদলোভী বিবেক বর্জিত দুর্বল চিত্তের কর্মী ছাড়া সকলেই আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাষ স্থাপন করে রাজনীতি করেছে।
এসকল বিষয় দলের সর্বোচ্চ নেতা ও ফোরামে উপাস্থাপন করা হয়েছে। তার পরও একে একে চলেছে দল বিদ্ধংসী কর্মকান্ড। সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের মাঝে কিছু ব্যক্তির চাওয়া একই। তাহলে কি আমরা আমাদের ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখবো নিশ্চই না। রাজনৈতিক কর্মীরা অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে করবে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং এর কোন সীমা রেখা নেই। দলের এ সংকটে প্রয়োজন ধৈর্য ঐক্যবদ্ধতা ও আগামীর রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত সুস্থ ভাবনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
এক্ষেত্রে আমি সকলের সাথে পরামর্শ করবো মতবিনিময় করবো এবং একটি প্রতিবাদী কর্মসূচি দাড় করাবো ইনশাল্লাহ এবং সেটি হবে দলের স্বার্থে ও নিয়মতান্ত্রিক। আমাদের সকলের দায়িত্ব ধৈর্য ধারন করা, সকল নেতাকর্মীর সাথে কথা বলা, বিভ্রান্ত না হওয়া জনমত গড়ে তোলা ও মহান রব্বুল আলামিনের কৃপা কামনা করা ।
দু এক দিনের মধ্যে আমি সংবাদ সম্মেলের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে খুলনা বিএনপিতে ঘটে যাওয়া সকল বিষয় উপস্থাপন করবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন আমিন।
\ বিভিন্ন জনের প্রতিক্রিয়া \
বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ফেসবুকে পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় বিলুপ্ত মহানগর শাখার কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক কমেন্টস করে লিখেছেন, কর্শীদের সাথে কথা বলতে হবে… ফোন ওপেন করুন… আমাকে কয়েকশত কর্মী ফোন করেছিল… আমি গতকাল প্রচুর নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছি… বেশিরভাগই আপনার আমাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়…
আপানার আমাদের ডাকে যারা জীবনবাজী রেখে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে তাদের সকলকে নিয়ে বসতে হবে, তাদের মত গুরুত্ব দিয়ে এবং আমাদের পরিকল্পনা ঠিক করে এগুতে হবে… আমাদের অবদান দলে ঐসব সুবিধাবাদীদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী… এমনি এমনিতেই সাব ছাড়া যাবে না… কর্মীরা আদর্শের পক্ষেই আছে…।
বিএনপি নেতা এডভোকেট চৌধুরী তৌহিদুর রহমান তুষার লিখেছেন, শুরু হলে শেষ হয়, জন্ম হলে মৃত্যু হয়, চাকরী হলে অবসর হয় এটা অনেকে মেনে নিতে পারেন না। দল অনেককে অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু তা অনেকে স্মরণ রাখে না। আচ্ছা যারা নতুন কমিটিতে এসেছে তারা কি বিএনপির নেতা কর্মী, নাকি অন্যদল থেকে এনে বসানো হয়েছে?
এর উত্তরে মাহবুবুর রহমান নামে এক নেতা লিখেছেন, চৌধুরী তৌহিদুর রহমান তুষার আপনি কাদের বিএনপি কর্মী বলেন, আপনি বলেন তো ভাই, এরা আমাদের জেলখানায় কয়দিন দেখতে গিয়েছিল, এরা আমাদের জামিনের ব্যাপারে কি ভ‚মিকা নিয়েছিলো, আমাদের হাজিরা থাকলে কয়দিন কোর্টে যেয়ে বসে থাকে, জেলখানায় থাকাকালীন প্রতিটা অসহায় পরিবারকে অর্থ দিয়ে কে সাহায্য করে গেছে। বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা কইরেন না তুষার ভাই।
মুজিবর রহমান ফয়েজ বলেন, দেশনেত্রী হাসপাতালে রক্তক্ষরণে মৃত্যুর প্রহর গুণছে আর সারা দেশে কমিটি করার নামে একপেশে কমিটি করে দলকে ঐক্য না করে দ্বিধাবিভক্তি করছে। এরা কোন বিএনপি? সকলকে নিয়ে কমিটি করতে হয়। জননন্দিত নেতাদের বাদ দিয়ে দল হয়না দল তাদের বাদ দিলেও দেশের রাজনীতিতে জায়গা হয়ে যায়। বিএনপির কমিটি করার খেলা এখন নয়। সারা দেশে এখনি এই খেলা বন্ধ করে বিএনপিকে বাঁচান। না হলে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সাথে বিএনপির ও মৃত্যু হয়ে যাবে। দলের মালিকদের প্রতি এই আহবান। সারা দেশের অবহেলিত ও প্রতিহিংসার শিকার সবাই এক হও।
গোলামুন নাবি ডালু লিখেছেন, পদ্মার এপারে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ যত দল আছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে প্রমাণ করে দেখান জনাব নজরুল ইসলাম মঞ্জুর চাইতে জনপ্রিয় কেউ আছে —– যারা বিরোধিতা করবে তারাও জানে যে সত্য কিন্তু মুখে স্বীকার করতে চায় না —– বিএনপির হাইকমান্ড জেনে রাখেন পদ্মার এপারে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জননেতা জনাব নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শরিফুল্ ইসলাম বাবু লিখেছেন, গতকাল সারাদিন নেতাকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। হাইব্রিড দালাল চামচাদের স্থায়িত্ব বেশীদিন থাকবে না। আপনি খুলনাবাসীর সাথে ছিলেন আছেন থাকবেন। আপনি খুলনার মাঠ ধরে রাখেন। এই ভ‚য়া কমিটি বেশীদিন থাকবে না। রাজপথ কখনো ও বেঈমানী করেনা। আমরা ছিলাম আছি থাকবো।
বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতা কাজী মনিরুজ্জামান লিখেছেন, হ্নদয়ে রক্ত ক্ষরণ নিয়ে চলতে হবে বিএনপির ত্যাগী, হামলা মামলায় শিকার ভুক্তভুগি নেতা কর্মীদের! মা’র রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে লিভারে, দলের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে সর্বত্র! সমর্থক ও জনগণ হচ্ছে অবাক, প্রকাশ করছে বিস্ময়!
শুক্রবার রাত ৯টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত ৭৪০ জন পোস্টটিতে লাইক দিয়েছেন, শেয়ার হয়েছে ৯৪টি এবং শতাধিক কমেন্টস হয়েছে।
খুলনায় বিএনপির আহবায়ক কমিটি প্রসঙ্গে সোস্যাল মিডিয়ায় মঞ্জু : রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা অযোগ্য ঘোষিত হলাম
Leave a comment