গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার মেট্রিকটন ফলন কম
মামুন খান
খুলনায় গত বোরো মৌসুমের তুলনায় এবার বেশি জমিতে আবাদ হলেও ধানের ভালো ফলন হয়নি। ধানের ফুল অবস্থায় তীব্র খরতাপ এবং সেচের পানির সংকটে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে, গত এক মাসের ব্যবধানে ধানের বাজার দর মণ প্রতি ১শ’ থেকে ১শ’৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে, গত ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সরকারের বোরো সংগ্রহ অভিযানে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সামান্যই পূরণ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনার নয় উপজেলাসহ মেট্রো অঞ্চলের দুইটি থানা এলাকায় গত মৌসুমে ৬০ হাজার ১শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এবার হয়েছে- ৬২ হাজার ৭শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে। গত মে মাসের মাঝামাঝি শতভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাইব্রিড জাতে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৮৫ মেট্রিকটন এবং উফশি জাতে ৩ দশমিক ৮০ মেট্রিকটন ফলন হয়েছে। চালের হিসেবে এ পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রচÐ তাপদাহ ছিল। তখন ধানের ফুল অবস্থা ছিল। তাপদানে ফুলের পরাগায়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল। একই সাথে বিভিন্ন স্থানের খালসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। এতে ক্ষেতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। এই দুই কারণেই মূলত গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার মেট্রিকটন ফলন কম হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা জানিয়েছেন- বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে ধান কাটা, মাড়াই ও বাজারজাত কাজ শুরু হয়। হাটে ধান বিক্রির পাশাপাশি ফড়িয়ারা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ধান কিনছেন। শুরুতে মোটা জাতের ধান ৭শ’ থেকে ৭শ’৭০ টাকা মণ এবং চিকন জাতের ধান ৯শ’ থেকে ৯শ’৩০ টাকা মণ দরে ফঁড়িয়ারা কিনছিলেন। ধান কাঁচা ও চিটা-এসব কথা বলে তারা এর বেশি দাম দিতে চাচ্ছিলেন না। বর্গাচাষী এবং অল্প জমির মালিক কৃষকেরা ধার-দেনা শোধ করতে এবং সংসারের খরচ যোগাতে দাম কম পেলেও ধান বেঁচতে বাধ্য হন। এখন তাদের অনেকের ঘরেই বিক্রির মতো ধান নেই।
কৃষকরা জানান, ১০-২০-৩০ টাকা হারে দাম বেড়ে চিকন ধান এখন এক হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ ৫০ টাকা মণ দরে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বোরো সংগ্রহ অভিযানে এক হাজার ৮০ টাকা মণ দরে নয় উপজেলার আটটি খাদ্য গুদাম এবং মানিকতলা এলাকার একটি সিএসডি গোডাউনে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। ৮ হাজার ৮শ’ ৭৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। এর বিপরীতে বুধবার পর্যন্ত ১২শ’ ৫০ মেট্রিকটন সংগ্রহ হয়েছে।
রূপসা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুজিত কুমার মুখার্জী বলেন, উপজেলায় ৮শ’ ৫৬ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লটারির মাধ্যমে ধান বিক্রেতা কৃষকও নির্বাচিত হয়েছেন-৮৫৬ জন। তারা প্রত্যেকে এক মেট্রিকটন করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। গত বুধবার পর্যন্ত ৪৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। বাজার দর ভালো পাওয়ায় খাদ্য গুদামে এসে ধান বেঁচতে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।
যদিও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছেন, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বোরো সংগ্রহ অভিযান চলবে। এখনও প্রায় তিন মাস সময় রয়েছে। নির্ধারিত সমরেয়র মধ্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির খুলনা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর রায় বলেন, বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের আবাসস্থল থেকে খাদ্য গুদামের দূরত্ব বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে যেয়ে অতিরিক্ত পরিবহণ খরচা গুনতে হচ্ছে। এতে অনেকে গুদামে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রয় কেন্দ্র চালু করে সরকার নির্ধারিত দামে ধান সংগ্রহের ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছেন।
খুলনায় বোরোর ফলন বিপর্যয়
Leave a comment