শেখ আব্দুল হামিদ : দিন যত যাচ্ছে ততই যেন জমে উঠছে খুলনার একুশে বই মেলা। রবিবার ছিল জাতীয় গ্রহন্থাগার দিবস। লেখক সাহিত্যিক কবি আর বইপ্রেমিদের আগমনে মুখরিত ছিল মেলার প্রতিটি চত্বর। নতুন পুরাতনের মিলনে ভাষার এ মাসে উদ্বেলিত ছিল প্রতিটি পাঠক হৃদয়। মেলার ষষ্ঠ দিনেও দেখা গেছে সন্ধ্যার পর দর্শনার্থীদের ভিড়। কেউ বই হাতে নিয়ে দেখছেন কেউ বা কিনে ঘুরছেন। বিকেল থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত এ ষ্টল থেকে ও ষ্টলে বই খুঁজে যেন তৃপ্তি মিটছে না।
সোমবার ছিল মেলার ষস্ট দিন। গণগ্রহন্থাগারের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই ঠিক ডান পাশে শুভেচ্চা লাইব্রেরী। এ স্টলের বিক্রেতা মৌসুমী দাস মেলার প্রথম থেকেই এখানে নতুন নতুন বই উপহার দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, দিন যত যাচ্ছে ততই বিক্রয়ের হার বাড়ছে। দর্শনার্থী আর বই প্রেমিদের আগমনও বাড়ছে। আলফা বুক হাউজের বিক্রেতা মনোজ কুমার দাস বলেন, গেল বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা আসাকরি ভালোই হবে। মেলার প্রথমে বই বিক্রি কম হলেও এখন বেশ বেড়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী সপ্তাহ থেকে মেলা আরও জমে উঠবে। মানুষের সমাগমের সাথে সাথে বইও বিক্রি বাড়বে। তাছাড়া আয়োজকরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছেন।
মেলার প্রতিটি স্টলেই বই ক্রেতাদের দাঁড়িয়ে থেকে নতুন নতুন বই খুঁজতে দেখা গেছে। তাদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছেন বিভিন্ন লেখক আর কবি। তাদের লেখা নতুন বই নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে তারা বই জমা দিচ্ছেন। আলফা বুক হাউজ, সততা লাইব্রেরী, খুলনা বুক ডিপো, মুসলিম লাইব্রেরী, বুক পয়েন্টসহ প্রায় ৮০টি স্টলের সামনেই দর্শনার্থী এবং বই ক্রেতাদের ভিড়। কথা হয় বই ক্রেতা নিলুফা ইয়াসমীন রানুর সাথে। তিনি বলেন, গত দু’দিন ধরে এখানে বই কিনতে আসছেন। তার পছন্দ বিদেশী লেখকের অনুবাদকৃত বই। তিনি দু’দিনে পাঁচটি বই সংগ্রহ করেছেন। তার মতে বই মেলায় যত সহজে মনের মত বই খুঁজে পাওয়া যায় অন্য সময়ে তা সম্ভব নয়। তাছাড়া ছোটদের গল্পের বইও তিনি দু’টি ক্রয় করেছেন।
গণগ্রহন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয় গ্রহন্থাগার দিবস উপলক্ষে র্যালি. আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঞ্চে সেমিনার, পুরস্কার ও সনদ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’। আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনার, উপপরিচালক (উপসচিব), মোঃ ইউসুপ আলী। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে গ্রন্থাগারের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি আযম খান কর্মাস কলেজের, সহযোগী অধ্যাপক তারক চাঁদ ঢালী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলমগীর কবীর, খুলনার জেলা শিক্ষা অফিসার, মোঃ কামরুজ্জামান এবং খুলনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারের উপপরিচালক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মহান বিজয় দিবস ২০২২ এবং জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বিভাগীয় সরকারি গণ গ্রন্থাগার, খুলনা কর্তৃক আয়োজিত রচনা, বইপাঠ, আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৩০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়। পরিশেষে দিবসটি উপলক্ষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন কবি এস এম হুসাইন বিল্লাহ।