শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : বুধবার সকাল ১০টায় খুলনা গল্লামারী মৎস্য সম্মেলন কক্ষে সচেতনতা মূলক প্রচারণা স্যানিটারি শর্ত এবং সীফুড পণ্যের গুণমান সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্টিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম,
স্বাগত বক্তব্য দেন সাসটেনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এর উপপ্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রী, খুলনা বিভাগ,খুলনা, সিনিয়র সহকারী পরিচালক বিশ্বজিৎ বৈরাগী,
খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রন, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল হাসান,
সাসটেনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এর উপপ্রকল্প পরিচালক মনিষ কুমার মন্ডল, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা, মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ খুলনা কর্মকর্তা লিপটন সরদার ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি জন বাণিজ্যিক ট্রলার মালিক/ প্রতিনিধি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের প্রতিনিধি- মৎস্য বাজার/আড়তদার প্রতিনিধি
আর্টিসানাল বোট মালিক/ মাঝি-
বরফ কল প্রতিনিধি চিংড়ি ক্লাস্টার প্রতিনিধি শুটকি উৎপাদক প্রতিনিধি মিডিয়া/গণমাধ্যম প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।।
বক্তব্য বক্তরা বলেন মাছ দ্রুত পচনশীল পণ্য এবং অপরাপর কাঁচামালের তুলনায় একটু বেশি মাত্রায় দ্রুত মাছের গুণগতমান বিনষ্ট হয়। সে জন্য মাছ আহরণ থেকে শুাং করে পরিবহন, বিপণন ও ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যড় প্রত্যেকটি ধাপ অত্যন্ত যত্ন ও সাবধনতার সাথে সম্পন্ন করা অত্যাবশ্যক। উলেখ যে, এখানে প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত মাছের আহরণ ও বিপণন সম্পর্কে আলোচনা না করে মূলত চাষকৃত মাছ সম্পর্কে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হবে। সামগ্রিকভাবে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে দুইটি উৎস থেকে মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে। একটি হলো প্রাকৃতিক উৎস অন্যটি হলো চাষকৃত মাছ। প্রাকৃতিক উৎসে উৎপাদিত মাছ ও চাষকৃত মাছের আহরণ পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উৎসে ইচ্ছামাফিক সময় নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা পরিমাপের মাছ ধরা সম্ভব নয়। অপরপক্ষে চাষকৃত মাছ সাধারণতঃ পরিকল্পনামাফিক আহরণ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও চাষকতৃ মাছ আহরণ প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরণের চেয়ে সহজতর। আমাদের দেশে মাছ আহরণের পর সঠিক সময়ে পরবর্তী কার্যক্রম সমূহ সুষ্ঠুভাবে সমাধা করা হয় না বিধায় মাছের গুণগতমান নষ্ট হয়। ফলশ্রুতিতে মাছের মূল্যও কমে যায়। মাছ আহরণের পর যথাযথ খাদ্যমান বজায় রেখে সজীব ও সতেজ অবস্থায় মাছ ভোক্তাদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হলে ক্রেতাগণ যেমন বেশি দামে তা ক্রয়ে আগ্রহী হবে, তেমনিভাবে মাছচাষিগণও বেশি দামে তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রয় নিশ্চিত করতে পারবো ।
চাষকৃত মাছ আহরণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। মাছ ধরার তেমন কোন একক পদ্ধতি নাই। বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয়ে থাকে। চাষকৃত মাছ ধরার প্রধান দুটো উপায়ের মধ্যে একটি হলো জাল টেনে মাছ ধরা এবং অপরটি হলো চাষকৃত জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা। জালটেনে মাছ ধরা হলে সব মাছ একত্রে ধরা যায় না, বটে কিন্তু বাজারজাত উপযোগী মাছ সনাক্ত করে পরিমান মত মাছ ধরা যায়। অপর দিকে পুকুর বা জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা হলে সব মাছ যেমন সহজে একত্রে ধরা যায়। তেমনিভাবে অসুবিধা হলো সব মাছ একই সময়ে বাজারজাত করতে হয়। একই সময়ে বেশি চাহিদার অতিরিক্ত মাছ বাজারজাত করলে মাছের প্রকৃত বাজার মূল্য পাওয়া অনেক সময়ই দুরূহ হয়ে উঠে। সেজন্য মাছ ধরার সাথে বাজার মূল্য এবং চাহিদা যাচাই করে নিতে হবে। তা’ছাড়া চাষের জন্য পুকুর বা জলাশয়ে মাছ মজুদ ও চাষের সময়কাল এবং মাছ আহরণ-এসবকিছু বিবেচনা রেখে মাছের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা করতে হবে। এছাড়াও পরবর্তী ফসলের জন্য পুকুর তৈরি, পোনার প্রাপ্তি ও সরবরাহ ইত্যাদি দিকেও নজর দিতে হবে। মাছ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণি বিধায় গ্রীষ্মকালেই মাছের বৃদ্ধি দ্রুততর হয়। অপরদিকে হ্যাচারিতে উৎপাদিত বেশিরভাগ মাছের পোনা ঋতুভিত্তিক পাওয়া যায় বিধায়, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে মাছের চাষ শুর করতে হয়। তাই মাছ ধরার ক্ষেত্রেও বাজারের চাহিদা উপযোগী মাছের আকার নির্ধারণ করে কখন মাছ ধরা যাবে তার ওপর ভিত্তি করে কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মাছচাষিদের মনে রাখতে হবে অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের তুলনায় নির্দিষ্ট সময়ে মাছ বাজারজাত করা না হলে তা পুকুরে সংরক্ষণ করার জন্য ব্যয়ও প্রচুর। কারণ মাছকে ঐ অতিরিক্ত সময়ের জন্য খাদ্য দিতে হয়-যা অত্যড় ব্যয়বহুল। সে যাই হউক, যে পদ্ধতিতেই মাছ আহরণ করা হোক না কেন, লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে আহরণের সময় মাছ আহত না হয় বা দেহে কোন প্রকার ক্ষত সৃষ্টি না হয়। মাছ আহরণের সময় আঘাতপ্রাপ্ত হলে আহত বা ক্ষতযুক্ত মাছে দ্রুত পচন শুরু হয়। অন্যদিকে পুকুর শুকিয়ে মাছ ধরা হলে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে দীর্ঘসময় মাছ কাদায় ডুবে না থাকে বা মাছের শরীরে কাদা না লেগে থাকে। মাছের শরীরে কাদা লেগে থাকলে মাছের রং ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সার্বিকভাবে মাছের মূল্য কমে যায়।
মাছ আহরণের কমপক্ষে ২৪-৪৮ ঘন্টা পূর্বে মাছকে কৃত্রিম খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। ভরা পেটে বিশেষতঃ সম্পুরক খাদ্যে পাকস্থলী ভর্তি অবস্থায় মাছ আহরণ করা হলে তাতে মাছের দ্রুত পচন শুরু হয় এবং মাছ যে ধরনের খাদ্য খেয়ে থাকে সেই খাদ্যের গন্ধ মাছের শরীরে যুক্ত হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছের বাজার মূল্য কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সম্পুরক খাদ্যে পেট ভর্তি অবস্থায় মাছ আহরণ এবং বাজারজাত করা।
খুলনা গল্লামারীতে সচেতনতা মূলক প্রচারণা ও আলোচনা সভা
Leave a comment