
এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা নবগঠিত জেলা ও মহানগর বিএনপি দুই মাসেও তাদের বেঁধে দেয়া সময়ে কমিটি দিতে পারেনি। তবে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঢাকায় প্রেরণ করেছেন জেলা ও মহানগরের আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। ফলে খুব শীঘ্রই আসছে পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি। তবে কারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা থাকছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এটাকে এসিড টেস্ট মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশিল করতে এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় মহানগরের ৩১ টি ওয়ার্ড এবং তিনটি ইউনিয়ন (আড়ংঘাটা, যোগীপোল ও আটরা গিলাতলা) কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত সংক্ষিপ্ত কমিটি থেকে বাদ পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ তাদের অনুসারীরা। ফলে খুলনা বিএনপিতে অবশেষে অবসান হলো নজরুল ইসলাম মঞ্জুর একক আধিপত্য। দীর্ঘ ২৯ বছর পর মহানগরের নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়লেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এ সংসদ সদস্য।
গত ৯ ডিসেম্বর দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাড. রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী ১৫দিনের মধ্যে আংশিক আহবায়ক কমিটির তিনজনের সুপারিশসহ সর্বোচ্চ ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নতুন কমিটিতে অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনাকে আহবায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে ১নং যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মো. শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে খুলনা মহানগর বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়। এছাড়া জেলায় আহবায়ক আমির এজাজ খান, যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন আবু ও সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম বাপ্পি।
যদিও কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি।
তার আগে নতুন আহবায়ক নগর শাখার বিদায়ী সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ সম্মেলন করে অযোগ্যদের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে তাদের নেতৃত্ব পূনবহালের দাবি জানান। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়ায় সর্বশেষ মঞ্জুকে শোকজ এবং ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। আর এ ঘটনার মধ্যদিয়েই খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছে। মঞ্জুর অনুসারীরা ‘গণপদত্যাগ’ শুরু করেছেন।
অপরদিকে, পদত্যাগ ঠেকাতে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে নগর বিএনপির ৫ থানা কমিটি।
কিন্তু নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যে কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি। এ নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মাঝে প্রথম দফায় যে আশার সঞ্চায় সৃষ্টি হয়েছিল তা ভেস্তে যায়। তবে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঢাকা প্রেরণ করেছেন জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। ফলে খুব শীঘ্রই আসছে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরে জেলা ও মহানগর বিএনপিতে আরেক দফা ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।
মঞ্জু বিহীন খুলনা বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মঞ্জুর পক্ষে তার অনুসারীরা এবং বিপক্ষের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার-বিশ্লে¬ষণ।
খুলনা বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় ২৯ বছর পর নগরের নেতৃত্বে নেই নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা মহানগরের ছাত্রদল এবং যুবদলের কমিটিতেও মূল নেতৃত্বে স্থান পাননি মঞ্জুর অনুসারীরা।
মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এড. শফিকুল আলম তুহিন বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথেও আলোচনা করা হয়েছে। কমিটিতে এবার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান দেওয়া হবে। আগামী দু’ এক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে বলে তিনি আরও জানান।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু হোসেন বাবু বলেন, ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই নতুন কমিটি দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন বর্তমান খুলনা বিএনপি আগের চেয়ে কয়েকগুন শক্তিশালি। নতুন কমিটি ঘোষণার পরে আমরা একাধিক কর্মসূচি পালন করেছি।
পদত্যাগকৃত নেতাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজনিতীতে মান অভিমান থাকবে। আশা করি খুব শীঘ্রই তা দূর হয়ে যাবে। যারা পদত্যাগ করছেন, তারাও ফিরে আসবেন আপন ঠিকানায়।