জন্মভূমি ডেস্ক : গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে এবং পরে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আলোচিত একাধিক মানুষ অবৈধ ভাবে বিদেশে যাওয়ার পথে আটক হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এদিকে গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ভাবে হয়েছে লুটপাট ও হামলার ঘটনা। সব মিলিয়ে অনেকেই দেশে বসবাস করাটা কতখানি নিরাপদ সেটা নিয়েও সংশয়ে।
খুলনার পার্শ্ববর্তী ভোমরা এবং বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভাগের ১০ জেলাসহ আশে পাশের মানুষ ভারতে যাওয়া আসা করে। ব্যবসা-বাণিজ্যে, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার কারণে অনেকেই ভারতে যায়। এছাড়া স¤প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ারও প্রবণতা বেড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের।
গত আগস্ট মাসে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের চিত্রে রেকর্ড পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে। আগস্টের ৭ তারিখে প্রায় ১০০ আবেদনকারী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও মাসের শেষ দিকে সেটা প্রতিদিন ৬/৭ গুণ বেড়ে যায়। যার কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অফিসের সময়সূচিও পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও নিয়মিত পাসপোর্ট অফিসে আসছেন খোঁজ খবর নেওয়ায় দালাল বা বহিরাগতদের সংখ্যাও কমেছে।
তবে পাসপোর্ট অফিসের প্রবেশদ্বারে ভ্রাম্যমাণ মোটরসাইকেল গ্যারেজে দালালের একটি চক্র নিয়মিত ছদ্মবেশে ব্যবসা করছে। আবেদন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে ছবি তোলার লাইনে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার আশ্বাসে তারা টাকা লুট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
রোববার ভোরে নগরীর বৈকালী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট আবেদনকারীদের দীর্ঘ লাইন খুলনা-যশোর পুরাতন সড়ক অবধি চলে আসছে। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সাদা পোশাকে আবেদনকারীদের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করছেন। অফিসিয়াল ভাবে পাসপোর্টের আবেদন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত নেওয়া হলেও আবেদনের চাপ বেড়ে যাওয়ার পর সেটা ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তায় রয়েছে মাত্র ৪ জন সাদা পোশাকধারী আনসার সদস্য। পাসপোর্ট অফিসের ২৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়েই এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ খানিকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬০০০, ফেব্র“য়ারিতে ৬২০০, মার্চে ৫৬০০, এপ্রিলে ৪৬০০, মে মাসে ৫২০০, জুনে ৪৩০০, জুলাইয়ে ৫৩০০ এবং আগস্ট মাসে প্রায় ৭২০০ পাসপোর্টের নতুন আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে আগস্টের ৫ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫০০ আবেদন পড়লেও শেষ ১৫ দিনেই জমা পড়েছে সাড়ে ৫ হাজার জমা। বিশেষ করে ২১ আগস্টের পর থেকে প্রতিদিন গড় ৭০০’র বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
রোববার দুপুরে জিরোপয়েন্টের কৃষ্ণনগর এলাকার অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী চয়ন সরকার জানান, তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এসেছেন। বটিয়াঘাটা উপজেলার ২নং ইউনিয়নের বাসিন্দা বিপদ মালা বলেন, ভারতে যাবো। তাই পুনরায় পাসপোর্ট রি-ইস্যু করাতে এসেছি।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোঃ আবু সাইদ জানান, ৫ আগস্টের পর আবেদনকারী অনেক কম হলেও ১৫ আগস্টের পর এটার পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। বর্তমানে এই চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা অফিসের সময়সূচি পরিবর্তনের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। দালালের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তিনি আরও বলেন, খুলনা অফিসে একদিনে ৮০০/৯০০ আবেদন কখনই পড়েনি। আবেদনকারীদের মধ্যে সনাতন ধর্ম, নারী এবং পুরুষের সংখ্যা বেশি হলে জানান তিনি।