
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনা বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে আইনগত দক্ষতা ও পেশাগত নৈতিকতা এবং অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খুলনা বয়রাস্থ নুরনগর বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তরের অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি ডাঃ মোঃ মনজুর কাদিরের সভাপতিত্বে অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সদস্য ও প্রাক্তন সভাপতি ডা: আব্দুর রউফ মোল্লা; বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, খুলনার পরিচালক ডা: মোঃ লুৎফর রহমান; বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সদস্য ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডাঃ খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহান; প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তণ উপ-পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান; বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস এবং আইএলএসটি, খুলনার পরিচালক ডা: নূরুল্লাহ মোঃ আহসান উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, ১৮৬২ সালে ভারতবর্ষের পুনে’তে সর্বপ্রথম সামরিক ভেটেরিনারি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। যেখানে ০১ বছর মেয়াদী ভেটেরিনারি কোর্স প্রদান করা হতো। ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে এ শিক্ষার সূচনা হয়। ইতোমধ্যে এই সেক্টরের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভেটেরিনারি শিক্ষা চালু হয়েছে। বর্তমানে ০১ টি পূর্ণাঙ্গ ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ০২ টি কলেজে ভেটেরিনারি শিক্ষা লাভ করা যায়। সর্বমোট ১৪ টি প্রতিষ্ঠান থেকে ভেটেরিনারি শিক্ষা দেওয়া হয়। এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই এত প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রদান করা হয়। ভেটেরিনারিরা পৃথিবীর সকল দেশে ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে গবেষণায় সফল ব্যক্তিরা তার গবেষণার অধিকাংশই প্রাথমিকভাবে প্রাণীদেহের উপর প্রয়োগ করেছে। মানব দেহ সংক্রান্ত যত এন্টিবায়োটিক বা ভ্যাকসিন তার অধিকাংশই প্রাণীদেহের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে প্রাণিসম্পদ। কিন্তু প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে দেশে পর্যাপ্ত ভেটেরিনারি ডাক্তারের অভাব। দেশে নিবন্ধনকৃত ভেটেরিনারিয়ানের সংখ্যা মাত্র সাত হাজার পেরিয়েছে। অবশ্য এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। মানব সভ্যতা ইতিহাসের উষালগ্ন থেকেই মানুষ যখন বন-জঙ্গলে, গুহায় বসবাস করত তখন থেকেই প্রাণীর সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। তাই মানুষের যত রোগ-ব্যাধি হয় তার একটা বড় অংশই প্রাণীকুল থেকে আসে। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রথম বারের মতো কৃষিবিদদের সম্মানিত করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশটি এগিয়ে নিতে হলে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা-যোগানের সমন্বয় প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে ভেটেরিনারিসহ লাইভস্টকদের পদোন্নতি বৈষম্য সমাধান করে বিভিন্ন গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছেন। বর্তমানে কৃষি, মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্পে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তা অকল্পনীয়। ২০১০ সালে যে মাংস উৎপাদন ছিল বর্তমানে তার চার গুণ বেশি মাংস উৎপাদিত হয়। এ ক্ষেত্রে ভেটেরিনারিদের অবদানও অনস্বীকার্য। ২০১৯ সালে সরকার কর্তৃক ভেটেরিনারি কাউন্সিলের কর্মক্ষেত্রে যে আইন প্রণয়ন হয়েছে তা কার্যকরী। এই আইনটি সম্পর্কে মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্প, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সবার জানা দরকার। এই আইনের মাধ্যমে প্রাণীকুল এবং মানবকুলে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করে তার বক্তব্য সমাপ্ত করেন। এছাড়াও সভায় উপস্থিত অতিথিবৃন্দরা তাদের বক্তব্য প্রদাণ করেন এবং এ সেক্টরকে আরো উন্নয়নের দিকে ধাবিত করতে হবে বলে উপস্থিত বক্তারা জানান।