
ডেস্ক রিপোর্ট : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে খুলনা-১ আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জেলার অন্যান্য আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষনা করলেও এই আসনে রয়ে গেছে ধোয়াশা। নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারনের ট্রামকার্ড আসনের সনাতনী ভোটারদের ভাবনা জুড়ে আছে নিজেদের নিরাপত্তা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ৯৯ খুলনা-১। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে দাকোপে ভোটার আছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৭ জন। সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মের ভোটার সংখ্যা বেশী থাকায় এই আসনটি বরাবরই আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসাবে পরিচিত। দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার বিএনপি এবং ইসলামী দল গুলো এই আসনটি নিজেদের দখলে নিতে শুরু থেকে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। খুলনার ৬ টি আসনের মধ্যে বিএনপি ইতিমধ্যে ৫ টি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষনা করেছেন। কিন্তু এই আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষনা নিয়ে থেকে গেছে ধোয়াশা। বিএনপির জোট শরীক বা সমমনা কোন দলের এ আসনে তেমন কোন সাংগঠনিক অবস্থা নেই। ওই সব দল থেকে প্রার্থী হওয়ার মত স্থানীয়ভাবে হেভিওয়েট কোন নেতাও নেই। যে কারনে ধারনা করা হচ্ছে নিজ দল থেকে হয়ত বিএনপি এখানে মনোনয়ন দেবে। এই আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত হাফ ডজন প্রার্থী। তবে মনোনয়ন দৌড়ে টিকে থাকা ৩ প্রার্থীর মধ্যে দু’জন আছে জোর আলোচনায়। খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আলহাজ্ব আমির এজাজ খান বিগত দিনের ন্যায় এবারও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি জোর আশাবাদী। তার অনুসারীরা মনে করেন বিগত ১৭ বছর হামলা মামলার শিকার হয়ে টিকে থাকা এই ত্যাগী নেতাকে দল নিশ্চয় মূল্যয়ন করবেন। হটাৎ করে অন্য কেউ এসে মনোনয়ন দাবী করলে সেটা তৃনমূল মানবেনা। অপরদিকে তার জোর প্রতিদ্বন্দি ৯০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি এবং তৎকালীন মহসিন হলের নির্বাচীত ক্রীড়া সম্পাদক জিয়াউর রহমান পাপুল। তিনি নির্বাচনী এলাকা জুড়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক গনসংযোগ ও প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অনুসারীরা মনে করছেন ৫ আগষ্ট ২০২৪ পরবর্তী বিতর্কিত কর্মকান্ডের যে প্রেক্ষাপটে তৎকালীন খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়, সেই প্রেক্ষাপটে খুলনা-১ আসনে একজন ক্লিন ইমেজের নেতার প্রয়োজনীয়তা পূরনে সাবেক মেধাবী ছাত্রনেতা জিয়াউর রহমান পাপুলের বিকল্প নেই। মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল নিশ্চয় সেটি বিবেচনা করবেন। এই ২ নেতার অনুসারীরা প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গনসংযোগ অব্যহত রেখেছেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি পার্থ দেব মন্ডল মনোনয়নের আশায় গনংযোগ করছেন। তার অনুসারীরা মনে করছেন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় তিনি বেশী ভাল করবেন কেন্দ্র নিশ্চয় সেটি বিবেচনা করবেন।
তবে শেষ পর্যন্ত কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন এমন ভাবনায় তাদের সমর্থকরা আছেন উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। এ ছাড়া বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের খুলনা জেলা ছাত্র ও যুবদলের সাবেক সভাপতি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম শামিম কবির, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তৈয়েবুর রহমান ও গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য সচীব এ্যাডঃ গোবিন্দ হালদার। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ দলের বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষনা করে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের খুলনা জেলা সহসভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা আবু সাঈদ দলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী মাঠে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ইসলামী দল গুলো শেষ পযন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে থাকবেন বলে আশা করছেন তারা।
এ দিকে সর্বশেষ জন শুমারী ২০২২ অনুযায়ী দাকোপে মোট জনসংখ্যা ১৫৯৩৬৯। এর মধ্যে হিন্দু ৮৬৭৬৬, মুসলিম ৬৯২১২, খ্রীষ্টান ৩৩৮১ এবং অন্যান্য ১০ জন। সে হিসাবে মুসলিম ৪৩.৪৩% এবং হিন্দু ভোটার আছে ৫৪.৪৫%। হিন্দু সম্প্রদায়কে বরাবরই আওয়ামী অনুসারী নৌকার ভোটার বলে মনে করা হলেও প্রার্থী এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা ফলাফল বদলে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। যেমন ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা নৌকা প্রতিকে ৬২২৪৭ ভোট পেয়ে এখানে নির্বাচীত হন। তাঁর নিকটতম সিপিবির অধ্যাপক অচিন্ত বিশ্বাস পেয়েছিলেন ১৮৩৯৮ ভোট। কিন্তু শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী তৎকালীন জেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে টেলিভিশন প্রতিকে পঞ্চানন বিশ্বাস জয়লাভ করেন। অনুরুপভাবে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের নৌকাকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রতীক চিংড়ী মাছ বিজয়ী হয়। ফলে এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে এই সনাতনী ভোট মূল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে । দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায় নানা কারনে ছিল ভীত আতংকগ্রস্থ। তবে গত শারদীয় দূর্গা পূজায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অত্যান্ত শান্তিপূর্ন পরিবেশে উৎসবটি পালিত হয়। নির্বাচনে নৌকা থাকবেনা এমন বিশ্বাসে সনাতনী ভোটাররা কেন্দ্রে যাবে কিনা এমন জল্পনার মাঝে মিলছে ভিন্ন আভাষ। হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা এবার এলাকার উন্নয়ন অপেক্ষা নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ভোট দিবেন। সম্প্রতি খুলনার ডুমুরিয়া এলাকায় অনুষ্ঠিত জামায়াতের বিশাল হিন্দু সমাবেশের বাতাস লেগেছে হিন্দু অধ্যুষিত এ অঞ্চলে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় মোড়ল বলেন, ৫ আগষ্ট ২০২৪ শে তৎকালীন সরকার পতনের পর দেশে সংগঠিত নানা ঘটনার উত্তাপ দাকোপেও লেগেছিলো। বলতে পারেন অনেকটা উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে আমাদের দিন কাটছে। সঙ্গত কারনে এবার সনাতনীরা দল বা প্রার্থী পছন্দে নিজেদের জান মালের নিরাপত্তা ও আত্নসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি সর্বাধীক বিবেচনায় নিয়ে ভোটাধীকার প্রয়োগ করবে বলে তিনি দাবী করেছেন।

