সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রার্থীর অভিযোগ- সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সালাম মূর্শেদেীর লোকজন এলাকায় ব্যপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
পরাজিত হয়ে শেখ আকরাম হোসেন অনেক কিছুই বলছেন- নারায়ন চন্দ্র চন্দ
এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন- সালাম মূর্শেদী
জন্মভূমি রিপোর্ট : সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী খুলনা-৪ ও ৫ আসনে ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগ করেছেন এ দুটি আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন এবং খুলনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা এ অভিযোগ করেন। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নারায়ণচন্দ্র চন্দ ও আব্দুস সালাম মূর্শেদীকে দায়ী করেছেন।
বেলা ১২ টায় সংবাদ সম্মেলনে শেখ আকরাম হোসেন বলেন, খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদীয় আসনে আমি মাত্র ১৭ হাজার ভোটের ব্যাধানে পরাজিত হয়েছি। পরাজিত হওয়ার পর থেকে আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের গুণ্ডাবাহিনী আমার এজেন্ট, কর্মী ও সমর্থকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট, দোকানপাট বন্ধ ও ভয়ভীতি প্রর্দশন অব্যাহত রেখেছে। ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা বিরাজময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমার ঈগল প্রতীকের এজেন্ট ছিল সাবিনা বেগম। ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্যের নেতৃত্বে সাবিনার বাড়িতে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। তাকে মেরে গুরুতর আহত করা হয়। তার দোকনপাট ভাঙচুর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবিও ভাঙচুর করে এসব গুণ্ডারা। পল্লীশ্রী কলেজ কেন্দ্রে ঈগলের এজেন্ট প্রিয়াংকা মণ্ডল, তার স্বামী প্রকাশ মণ্ডল ও তার শ^শুর-শাশুড়িকে মারপিট করা হয়। বাদুরগাছায় নয়ন গাজী ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগমকে মারপিট এবং প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভাঙচুর করা হয়। পরে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা বাড়িঘর ছেড়ে তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তায় বসবাস করছে। সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠী গ্রামের নৌকার সমর্থক ইলিয়াস ফকিরের নেতৃত্বে আমার সমর্থক তুহিন শেখ, আদম শেখ ও পল্লী চিকিৎসক ওহিদুল শেখকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের মির্জাপুর গ্রামের দেবাশীষ মেম্বরের নেতৃত্বে জোর করে ভোট নেওয়ার অভিযোগ আগেই প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে করা হয়েছিল। ফলাফল ঘোষণার পরে দেবাশীষ মেম্বর, গণেশ বৈরাগী ও আশিষ মহালদারের নেতৃত্বে ঐ ওয়ার্ডের আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক স্কুল শিক্ষক শ্যামপদ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা করা হয়। ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়। রুদাঘরা চেয়ারম্যান তৌহিদ গাজীর নেতৃত্বে তার ভাইপো স্বাধীন, মাজিন এবং রবিউলসহ একদল সন্ত্রাসী ৭/৮ টা মোটরসাইকেলে এসে শাহপুর বাজারের মাছের আড়তের সামনে রুদাঘরা গ্রামের ফজর সরদারের ছেলে বাবলু সরদারকে মারপিট করে আহত করে। মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের শহর আলী, বেতাগ্রামের শহিদুল ইসলাম ও মজিদ
গাজীকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে নীতিশ মণ্ডল ও বিমলকৃষ্ণ মণ্ডলের বাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর করেছে। মাগুরাঘোনার মতি মেম্বরের নেতৃত্বে রমজান সরদারকে মারপিট করা হয়েছে। শোভনার গাবতলায় আব্বাস খান, দীনেশ মল্লিক ও তার ছেলে সত্য মল্লিকের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ দের নেতৃত্বে হাজিবুনিয়া গ্রামের শম্ভু মণ্ডল, পাপন মণ্ডল ও পেড়িখালী গ্রামের পরিমল বাছাড়কে মারপিট করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা উভয় প্রার্থী আওয়ামী পরিবারের। অথচ নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের পরে চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য, চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ, চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ দেসহ যারা আমার আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করছেন। এসব ঘটনা পুলিশ সুপার ও স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানানো সত্ত্বেও তারা সহিংসতা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
অপরদিকে দুপুর দেড়টায় একইস্থানে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৪ আসনের কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা অভিযোগ করে বলেন, এ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর কর্মী-সমর্থকরা এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটাচ্ছে। তেরখাদা উপজেলার ৩ নম্বর ছাগলাদাহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম দীন ইসলামের নেতৃত্বে আমার কর্মী এসকেন শেখকে গুরুতর জখম করা হয়েছে। আজগড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নির্ধারিত সীমার বাইরে বাদশা মল্লিক ও তার গুণ্ডা বাহিনী কেটলির ভোটার লিস্ট সরবরাহকারী শিল্পী, তার ছেলে ও তার বাবা মো. আব্দুল কুদ্দুস তালুকদারকে মারধর ও অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। চেয়ার-টেবিল এবং কাজের সরঞ্জাম-তথা কাগজ কলম, ভোটার স্লিপ ও ভোটার লিস্ট সব ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদী তার অফিসে তার সমর্থকদের উদ্দেশে উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আসাদুজ্জামান বাবর নেতৃত্বে, দেব প্রসাদ কুণ্ডুকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। শেখপুরার সাবেক মেম্বর আশরাফ মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী ও তার ছেলে টিটু কেটলির পক্ষে থাকার কারণে তাদের ওষুধের দোকান বন্ধ করে। তেরখাদা উপজেলার ৩ নম্বর ছাগলানাহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দীন ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর শেখের বাড়ি হামলা করে তার নাতি শেখ কাইস জামান নোমানকে আহত করে। বাড়িতে হামলা ও লুটপাট ও চালায়। দেয়াড়ায় রেজাল্ট ঘোষণার পর মিরাজ মেম্বারের নেতৃত্বে মেহবুবের ছেলে তপু ও তার স্ত্রীকে মারপিট করেছে। তপু এখন খুলনা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। ছাগলাদাহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দীন ইসলামের নেতৃত্বে হাসান শেখকে মেরে আহত করা হয়েছে। ইলাইপুর ফকির বাড়ির মোড়ে আমাদের কর্মী কামালকে মারপিট করেছে মিকাইলের নেতৃত্বে সোহেল মেম্বারের লোকজন। বাবর মেম্বারের ছেলে বাঁধনের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধদল জাবুসা স্কুল মোড়ে পান দোকানদার কেটলি প্রতীকের সমর্থক মামুন ও রশিদকে মারপিট করে আহত করেছে। খায়রুল হাওলাদারের কয়েকটি দোকানে তালা মেরে দিয়েছে সোহেল মেম্বার। মিন্টু ও মিঠু মেম্বারের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ামুল হত্যা মামলার মূল আসামি মিরাজ মল্লিক ও হান্নান শেখ জামিনে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিট ও হত্যার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। মো. সোহেল রানার দোকান তালা মেরে দিয়েছে। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের অভিযোগের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের বিজয়ী সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, পরাজিত হয়ে শেখ আকরাম হোসেন অনেক কিছুই বলছেন। তার অভিযোগ সবই মিথ্যা। কর্মীদের বোঝানোর জন্যই সে এ সব কথা বলছেন। খুলনা-৫ আসনের পরিবেশ খুব শান্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনাও খোঁজ নিতে পারেন।
সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, উনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী দারা) ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন। অনেক সময় ব্যত্তিগত বিরোধ রাজনৈতিকভাবে দেখানো হচ্ছে। তবে আমি সবার সংসদ সদস্য। ভোটারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। সুতরাং কাউকেই মারপিট, হুমকী-ধামকী ও হয়রানি করার সুযোগ দেওয়া হবে না।