জন্মভূমি রিপোর্ট : সর্বশেষ ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রার্থী মাত্র ২টিতে বিজয়ী হন। বাকি ১২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তদের এই পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের হাত রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে থাকেন পরাজিত প্রার্থীরা। চারবারের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। কিন্তু পরাজিত প্রার্থীরা এবার তার সাথে নেই। অধিকাংশরাই প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের পক্ষে কাজ করছেন।
ডুমুরিয়া-ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসন গঠিত। গতকাল শনিবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে ‘নৌকা‘ ও ‘ঈগল‘ প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। তবে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, তারা ভোট দেওয়ার গ্যারান্টি চান। সুষ্ঠু ভোট দেওয়ার পরিবেশ না থাকলে তারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। কেউ কেউ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া অনেকের মধ্যে ভোট দেওয়ার অনাগ্রহও প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি স্বতন্ত্র প্রার্থীর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা বলেছেন, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করেন। ফলে ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতেই পরাজিত হয় নৌকা সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। সংসদ সদস্যের আর্শিবাদপুষ্ট স্বতন্ত্র নির্বাচিত দশজন চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র চন্দের পক্ষে কাজ করছেন। অপরদিকে পরাজিত নৌকার ৯ জন প্রার্থী সরাসরি আকরাম হোসেনের পক্ষে রয়েছেন।
খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন রুদাঘড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তৃতীয়স্থান লাভ করেন। এটিকে তিনি ভালোভাবে নেননি। তাকে আকরাম হোসেনের পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখাগেছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কাজী আলমগীর গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে চতুর্থস্থান লাভ করেন। তার এভাবে শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে নারায়ন বাবুর হাত রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাকেও ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে।
এলাকা ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ফুলতলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেনের অবস্থা খুবই ভালো। তবে তার নিজ ইউনিয়ন দামাদর ও জামিরায় নারায়ন চন্দ্র চন্দের শক্ত অবস্থান রয়েছে। অপরদিকে ডুমুরিয়ার বাসিন্দা নারায়ণ চনন্দ্র চন্দ এ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২ টি ইউনিয়নে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। এসব এলাকায় জোরে সোরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আকরাম। তবে ধামালিয়া ও সাহস ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তা খুবই ভালো।
ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া ইউনিয়নের ভোটার আব্দুস সাত্তার গাজী বলেন, নারায়ণ চনন্দ্র চন্দ টানা ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তার জনপ্রিয়তা কমেছে। এলাকার মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। নতুন মূখ চান।
আটলিয়া ইউনিয়নের ভোটার কারিমুল ইসলাম সুষ্টু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, এবার নির্বাচন বাঁধাগ্রস্ত হলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
রুদাঘরা ইউনিয়নের ভোটার আবু তালেব শেখ বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দ এলাকার পাশ দিয়ে গেলে হাত মেলান না। হাত নেড়ে চলে যান। তাছাড়া বিগত ইউপি নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাজেই আমরা এবার পরিবর্তনের পক্ষে।
এদিকে এ আসনে অপর দুই প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. শাহীদ আলম ‘লাঙ্গল‘ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার ‘হাতুড়ী‘ প্রতীকের কোন প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, খুলনা-৫ আসনে এবার ভোটার ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২১৯ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩৫টি এবং বুথ থাকবে ৮৪৫টি।
এ আসনে ২০০০ সালের ৬ অক্টোবর সালাউদ্দিন ইউসুফ মৃত্যুর পর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর উপ-নির্বাচনে সর্বপ্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি-জামাত জোট প্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারের কাছে হেরে যান। এরপর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হন। মোট চারবার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
অপরদিকে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শেখ আকরাম হোসেন এক সময় ফুলতলা উপজেলার দাপুটে জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। খুলনায় জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগে যোগদান করে তার দক্ষতা এবং যোগ্যতায় বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ।
খুলনা- ৫ আসনে নারায়ণ-আকরামের সমানে সমান প্রচারণা: বাড়ছে উত্তেজনা
Leave a comment