
গত ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দলটি নিষিদ্ধ হওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী প্রথমেই তাদের দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এরপর থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে জাতীয় ও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে মতবিনিময় করে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানান দিচ্ছেন।
অপর দিকে,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আসনটিতে এখন পর্যন্ত কাউকে চুড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা না করায় সেখানকার অন্তত ৭জন সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় ও জাতীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন। আবার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দুইএকজন প্রার্থী প্রাচার-প্রচারনার অংশ হিসেবে
গোটা নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
বর্তমানে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জিয়া ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর (প্রেগ্রাম) আমিরুল ইসলাম কাগজী, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ডাঃ মো. আব্দুল মজিদ, জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম রফিকুল ইসলাম, এম জুবায়ের আহমেদ ও এস রহমান।
রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘ দিন জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশগ্রহন করায় শরীক দল জামায়াতকে ছাড় দেওয়ায় আসনটিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে প্রার্থী দিলেও আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করায় সাধারণ ভোটাররা জামায়াতের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী এন্ট্রি ভোটাররা জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসকেই ম্যান্ডেট দেয়। ঐ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জি,এ সবুর ১৬,৮৩৫ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. শেখ মো. নূরুল হক ৬৬,০৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেও জামায়াতের প্রার্থী শাহ্ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ৪৯,০২৩ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দি থাকেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মঈন উদ্দিন সরকার ৬,৬০২ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন। ঐ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস ৫৮,৩৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ নূরুল হক ৫৭,৬৬৯ ভোট পান। এরপর আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন প্রার্থী হতে। বিএনপির দাবি, সময়ের পরিক্রমায় আসনটিতে বিএনপির অবস্থান যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক শক্ত। তাছাড়া আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাইরে থাকলে তাদের তৃণমূলের বুথমূখী ভোটারদের সমর্থন যে কারো বিজয়ের পথে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপিই এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন তারা। তবে প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা ও সাদা ইমেজের জনবান্ধব হতে হবে।
নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ আসনটিতে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথাক্রমে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স.ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে মুসলিম লীগের খান এ সবুর নির্বাচিত হন। এরপর সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জহুরুল হক, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে আসনটি শূণ্য থাকে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হক, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জামায়াতের শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহরাব আলী সানা নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যথাক্রমে শেখ মো. নূরল হক, আক্তারুজ্জামান বাবু ও মো. রশীদুজ্জামান নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সময় আওয়ামীলীগ কখনো জামায়াত ইসলামী বিজয়ী হলেও ২০২৪ এর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে নতুন উদ্যমে বেড়ে ওঠা বিএনপি ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তার বহুলাংশে নির্দ্ধারণ করছে প্রার্থীতার উপর। তাই আপাতত ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে জামায়াতের একক ও বিএনপির অর্ধ ডজন প্রার্থী রাজনীতির মাঠ গরম করছেন।