শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির যেন শেষ নেই। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক গণসংযোগকালে তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে খুলনাকে একটি অত্যাধুনিক তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আরেকবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে মেয়র হিসাবে নির্বাচিত করার আহবান জানাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টি (জাপার) মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু গণসংযোগকালে বন্ধ মিল কলকারখানা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফ এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় গণসংযোগে বের হন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন এবং আর্তসামাজিক উন্নয়নে ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব অনস্বীকার্য। এজন্য তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। তাহলে গ্রহকরা তাদের প্রাপ্য সঠিক সেবা পাবেন। তালুকদার আব্দুল খালেক আরো বলেন, খুলনাবাসী ব্যাংক সেবা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গণসংযোগকালে তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মফিদুল ইসলাম টুটুল, শ্রমিক লীগ নেতা রণজিৎ কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ ব্যাংক সিবিএ সভাপতি মো. হারুনার রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন, অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সেলিমুজ্জামান, আব্দুর রহমান, আব্দুল ওহাব, আলী গিয়াসসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ এবং হরিজন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে খালিশপুর থানা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু নগরীর ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা মোড়, রূপসা স্ট্র্যান্ডরোড, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, শিপইয়ার্ড, লবণচরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় অংশ নেন। এ সময় লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এক সময় খুলনা ছিল শিল্প নগরী। আজ সেই নগরী ক্ষুধা, অভাব ও দারিদ্রতার নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ জানতে চায়, ঐ মিল-কলকারখানা বন্ধ কেন? আওয়ামী লীগ প্রার্থীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা তো দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায়, কী করেছেন খুলনার সাধারণ মানুষের জন্য? ঐ ১৫ বছরে কী একটিও মিল-কলকারখানা চালু করতে পারেননি। আজ যদি জাপা ক্ষমতায় থাকতো তাহলে মিল কলকারখানা বন্ধ হতো না। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করলে খুলনার বন্ধ মিলগুলো চালু করবো।
অপরদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফ এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নগরবাসীর উদ্দেশে ২৮ দফা কর্মসূচি তুলে ধরে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রথম ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে পায়েচালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করারও ঘোষণা দেন তিনি। ইশতেহার ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনসহ জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দ। পরে তিনি হাতপাখা মার্কায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন স্যার ইকবাল রোড, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লেরোডসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
আদালতের রায়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন মুশফিক
কেসিসি) নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুশফিকের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে আর বাধা রইল না মুশফিকের। এসব তথ্য জানিয়ে মুশফিকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, এ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এরআগে গত ১৮ মে ৩০০ সমর্থনকারী ভোটারের সমর্থনের তথ্য ভুল থাকায় মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে মুশফিকের প্রার্থিতা বাতিল বলে ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন। গত ২৩ মে আপিল শুনানিতে মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লর রহমান চৌধুরী। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক।