
শামীম হোসেন, অভয়নগর : কথায় বলে “যশোরের যশ, খেজুরের রস” খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় খেজুর গাছিরা, গাছ তোলা, গাছে নলি দেওয়া এবং খেজুরের রস এবং গুড়ের ভাড় প্রস্তুতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। জানা যায়, ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে যশোর জেলা একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম স্বাধীন জেলা যশোর। দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসাবে সীকৃতি প্রাপ্ত জেলা যশোর। প্রতিবছর শীতকালে শুধু যশোরেই প্রায় ৫২.৮ থেকে ৫৩ লাখ কেজি গুড় উৎপন্ন হয়। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার খেজুর গাছ থেকে ৪১ কোটি ভাড় রস উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রাচীনকাল থেকেই যশোর খেজুর রস এবং গুড়ের জন্য বিখ্যাত।
সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমানে পেশাদার হিসেবে মাত্র ৬৯০ থেকে ৭০০ জন গাছি রয়েছেন। ১০ বছর আগেও এর ১০ গুন বেশি গাছি ছিলো বলে জানা যায়। গাছির অভাবে এসব গাছ খেজুরের গুড়ের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। দিন-দিন গাছির সংখ্যা কমে যাওয়া এবং রস জ্বালানোর জন্য জ্বালানির অভাবে বর্তমানে খেজুরের গুড় উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। অক্টোবর থেকে ফেব্রয়ারি পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। সূত্রে জানা যায়, অভয়নগর উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজারের অধিক খেজুর গাছ আছে। বর্তমানে প্রায় ৪৯ হাজার ৯ শত গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণ করা হচ্ছে। খেজুরের চারার বয়স পাঁচ বছর হলে রস আহরণের জন্য গাছ কাটা শুরু হয়। একটি খেজুর গাছ থেকে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। বছরের অন্য সময় গাছিরা অন্যান্য পেশায় নিয়জিত থাকেন।
বন বিভাগের অফিস থেকে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলা আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই তাই খেজুর গাছ এমনিতেই জন্মে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে খেজুরের বাগানের সৃষ্টি হয়েছে। সামনে শীতকাল তাই অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের কদর বেড়েছে। নভেম্বরে খেজুরের গাছ থেকে পাওয়া যায় গাড়ো মিষ্টি রস আর এই রস জ্বালিয়ে ঝোলা, দানা এবং পাটালি গুড়, তৈরি করা হয়।
খেজুর গাছি হাছান সেখ ও নজরুল ঢালি বলেন, আমরা প্রতিবছর এ সময়ে খেজুর গাছ কেটে থাকি। বছরের শীতকালে খেজুরের রস পাওয়া যায়। গাছির সংখ্যা এখন কম। এই এলাকায় ৪ জন গাছি আছি। প্রতিভাড় রস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রয় করি। তবে গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাছিরা অন্য পেশায় ঝুকে পড়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, উপজেলায় অনেক খেজুর গাছ আছে। তবে গাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় রস এবং গুড় অধিক দামে ক্রয় করতে হয় ক্রেতাদের। গাছিদের উদ্ভুদ্ব করতে গত পহেলা নভেম্বর ২০২৩ বুধবার দুপুরে উপজেলার ধোপাদী গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে খেজুর গাছি সম্মেলন করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন, যুব বিষয়ক কর্মকর্তা আন্জুমোনোয়ারা, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রশান্তি মল্লিক, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক শাহিন আহমেদ, সদস্য জাকির হোসেন হৃদয়, আরো উপস্থিত ছিলেন দুইজন খেজুর গাছি এবং একজন গাছ মালিক। যাতে যশোরের অভয়নগরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা যায় তারই প্রচেষ্টায় উক্ত সম্মেলন করা হয়। তিনি আরো বলেন খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে প্রত্যেকটা সড়কে লাগানো হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আবু নওশাদ জানান, এই অঞ্চলের ঐতিহ্য খেজুরের রস ও খেজুরের গুড়। সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে ও খাঁটি খেজুর গুড় তৈরিতে আমাদের এই খেজুর গাছির সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে মোটামুটি সুফল পাবেন এই অঞ্চলের মানুষ তথা দেশবাসী।