
জন্মভূমি ডেস্ক : একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে মাহে রমজানের মাঝখানের মাগফিরাতের দশকটি। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা পাওয়ার সবচেয়ে বড় অবলম্বন তার প্রতি প্রেম ভালোবাসা, ইখলাস, তাওয়াক্কুল এবং ভালোমন্দ বিপদাপদ সর্বাবস্থায় তাকদিরে বিশ্বাস। তাকদিরে বিশ্বাস করা প্রথমত ফরজ। দ্বিতীয়ত বড় উপকার হলো এর দ্বারা জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রচন্ড মনোবল সৃষ্টি হয়। মানুষ গায়রুল্লাহর দিকে বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে অহেতুক সাহায্য সহযোগিতা কামনা করা, শিরক করা থেকে নিষ্কৃতি পায়। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল। তাই তুচ্ছ কোনো বিপদের সময়েও কোনো প্রকার সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বোধ করলে সেদিকে সে সাহায্য পাওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অথচ জগতের সকল ভাল মন্দের মালিক হলেন আল্লাহ তায়ালা। মানুষের এ দুর্বলতাই তাকে ধীরে ধীরে গায়রুল্লাহর দিকে নিয়ে যায়। তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন মানুষকে তার এ দুর্বলতা থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীল করে দেয়।
হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, একদা আমি নবী করীম (স) এর পেছনে যাচ্ছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, সবসময় আল্লাহকে স্মরণ রাখবে, তা হলে তিনি তোমার তত্ত্বাবধান করবেন। আল্লাহকে স্মরণ না রেখে যদি সকল মানুষ মিলেও তোমরা কোনো কল্যাণ করতে ইচ্ছা কর, সে ক্ষেত্রে তোমরা তা করতে সক্ষম না। আর সকলে মিলে তোমার ক্ষতি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও তোমার তাকদিরে নির্ধারিত জিনিসের বাইরে তারা কোনোই ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, তাকদিরের সঙ্গে তদ্বিরের (প্রচেষ্টার) কোনো সংঘাত নেই। কার্য সম্পাদনের জন্য আসবাব তথা উপায় উপকরণ ইত্যাদির অবলম্বন করাকে তদ্বির বলে। কার্য সম্পাদনের আসবাব গ্রহণ করা তাকদিরে বিশ্বাসের পরিপন্থীও নয়। আর অনাদিকালে লিপিবদ্ধ তাকদিরে এ আসবাব অবলম্বন করার কথা লিখিত আছে। তাকদিরে আস্থা রেখে আসবাবের অবলম্বন প্রসঙ্গে একবার সাহাবীগণ নবী করীম (স) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অসুস্থতার সময় ওষুধ ব্যবহার কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ঢালের ব্যবহার তাকদিরের লিখনকে খ-ন করতে পারে কি? উত্তরে নবী (স.) ইরশাদ করেন, আসবাবের অবলম্বন করার বিষয়টিও তাকদিরে লিপিবদ্ধের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যেখানে একথা লেখা আছে যে, মানুষ ওষুধ ব্যবহার করে উপশম লাভ করবে কিংবা ঢাল ব্যবহার দ্বারা শত্রুর আঘাত থেকে বেঁচে যাবে। কাজেই বোঝা যায়, আসবাব গ্রহণ তথা তদ্বিরের ব্যাপারটিও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত।
তাকদির বিষয়ে গভীর তত্ত্বানুসন্ধান কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া সকলের জন্য নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে এ বিতর্ক মানুষকে গোমরাহী এক কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের নিকট আগমন করেন। এ সময় আমরা তাকদির সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এতে তিনি এমন রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর মোবারক মুখম-ল লাল হয়ে গিয়েছিল, যেন ডালিমের রস মেখে দেওয়া হয়েছে। তারপর বললেন, তোমাদের কি এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অথবা আমাকে এ বিষয় তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে? মনে রেখ, পূর্ববর্তী জাতিগুলো তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তারা এসব বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই তোমাদের আমি কঠোরভাবে বলছি, এ ব্যাপারে তোমরা আলোচনা পর্যালোচনা কিংবা বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। (তিরমিযী)।
আসুন, পবিত্র মাহে রমজানে ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসটির ব্যাপারে আমাদের ধারণা শাণিত করি।