
জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশ সরকার গত এক দশকে শক্তিশালী শ্রম আইন ও শ্রম নীতি গড়ে তুললেও এই নীতিমালায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার অন্তর্ভূক্তের আহ্ববান জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, শ্রমিক ইউনিয়ন, গ্লোবাল ব্র্যান্ড এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে চুক্তির কারণে গার্মেন্টস কারখানার কাজের পরিবেশ আরো নিরাপদ হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজ করেছে। ডেটা অ্যাক্সেসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা জন্য বাংলাদেশ শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থাকেও ডিজিটাইজ করেছে। বাংলাদেশ সরকার একটি শক্তিশালী শ্রম আইন ও নীতি গড়ে তোলার জন্য গত দশকে কাজ করেছে। তবে এটি যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে নীতিমালায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
‘রানা প্লাজা ট্রাজেডি- ১০ বছর’: শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও আমরা এখন কোথায় আছি?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। ইউএসএআইডি, সলিডারিটি সেন্টার-বাংলাদেশ অফিস এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল(আইবিসি) যৌথ উদ্যেগে এই সভার আয়োজন করে।
রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা।
১০ বছর আগের রানা প্লাজা দুর্ঘটনা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূত বলেন, এই দুর্ঘটনা মাধ্যমে বাংলাদেশের কারখানার শ্রমিকদের অনিরাপদ পরিবেশ সম্পর্কে বিশ্ব জেনেছে এবং পোশাক শিল্পে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ দুর্ঘটনা শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপদ কারখানা নিশ্চিত করার জন্য এটি সংগ্রামের করেছিল।
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবাজারে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে পিটার হাস বলেন, কয়েক হাজার দোকান পুড়ে গেছে। হাজার হাজার পরিবারের জীবিকাকে কেড়ে নিয়েছে এই আগুন। তবে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ, চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড এবং হাসেম ফুড ফ্যাক্টরিতে আগুনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত। এই ঘটনাগুলো সব শিল্প সেক্টরে অত্যবশ্যকীয় পরিদর্শন এবং শ্রম আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। প্রত্যক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব আরা জোরালো করে।
শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়নে পিটার হাস কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন। এগুলো হলো- শিল্প খাত রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের বাইরে শিল্প সুরক্ষায় বৃহত্তর অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা, শ্রমিকদের স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যোগদান করা এবং কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য সম্মিলিতভাবে দর কষাকষির অধিকার শক্তিশালী করা, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং শ্রম অধিকারের জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করা এবং পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শ্রম অধিকার উন্নতি করা।
সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম বলেন, শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কারখানায় নিরাপত্তা কমিটি চালু করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। শ্রম আইন সংস্কারের একটি প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে, দৃঢ় আইন না থাকলে কিছুই বাস্তবায়ন করা যায় না।
বৈঠক শুরুতে আইবিসির সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের পর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আইবিসির সদস্য রাশাদুল আহমেদ রাজু ধারণাপত্র পাঠ করেন। মতবিনিময় সভায় আরো অংশ নেন সলিডারিটি সেন্টারের ডেপুটি কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মনিকা হার্টসেল, ব্লাস্টের ডিরেক্টর (লিগ্যাল) বরকত আলী, সমাজতানিন্ত্রক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমূখ। সভায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দেয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, যদিও আপিল বিভাগ স্বল্প সময়ের জন্য রানা জামিন স্থাগিত করেছে। জামিন নয় তার (রান) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন বক্তরা।