
এম সাইফুল ইসলাম
মুক্তিযুদ্ধে আত্বদানকারী ফুলতলা উপজেলার দামোদরের সাহাপাড়ার নারী মুক্তিযোদ্ধা শান্তিলতা সাহা। পিতা অবিনাশ সাহা। পিতা মাতার চার সন্তানের জৈষ্ঠ কন্যা এ শান্তিলতা।
এসএসসি পাশ করেন ১৯৬৭ সালে ও এইচএসসি পাশ করেন ১৯৬৯ সালে। তার চাচাতো ভাই বিষ্ণুপদ সাহা জানান, কলেজ জীবনেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা প্রস্ফুটিত হয়। তবে আমরা সেটি বুঝতে পারিনি। যে রাজনৈতিক আদর্মে অবিচল ও বিচক্ষন সেটা পরে বুঝতে পারি। তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে।
জানা যায় তিনি কলেজ জীবন থেকেই মার্কসবাদে দিক্ষিত হয়। তখন মার্কসবাদি আদর্শ দেশে নিষিদ্ধ ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা যশোর সেনানিবাস থেকে খুলনায় আসার পথে ফুলতলায় বাধাপ্রাপ্ত হন। এখানে পাকিস্তানি সেনাদেও হাতে নিহত হন ডাঃ মনীন্দ্র নাথ সুর। এরপরই শুরু হয় পাকবাহিনীর হত্যা, লুটতরাজ ও নির্যাতন। এদেরকে সহযোগিতা করে ফুলতলার সরোর নেতৃত্বে গড়ে তোল সরো বাহিনী। এদেও বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে রফি বাহিনী। এক পর্যায়ে এই বাহিনী রাজাকারদেও ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। বাহিনীর প্রধাণ সরোকে রফি বাহিনী একপর্যায়ে সরো বাহিনীর প্রধানকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এই রফি বাহিনীর সদস্য ছিলেন শান্তিলতা। ততক্ষনে নারী মুক্তিযোদ্ধ হিসেবে নাম ছড়িয়ে পড়ে শান্তিলতার। তিনি তখন পিপরাইল গ্রামে থাকতেন। সরোকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে সরো বাহিনী ততক্ষনে মরিয়া হয়ে ওঠে। একইভাবে শান্তিলতাকে ধরে নির্র্যাতনের নানা কৌশল আটে। অবশেষে একাত্তরের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে পিপরাইল গ্রামে আক্রমন করে রাজাকাররা। এ সময় শান্তিলতাকে তারা তুলে নিয়ে যায়। তার ওপরে নির্মম ভাবে নির্যাতন করা হয়।
এরপরে একাধিকবার রফি বাহিনী তাকে উদ্ধারের জন্য ব্যার্থ অপারেশন চালায়। একপর্যায়ে রফি বাহিনীর প্রধান রফিকেও রাজাকার বাহিনী আটক করে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। তবে শান্তিলতাকে কেউ উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি খুজেও পাওয়া যায়নি তার লাশ।
এ নিয়ে রফির ছোট ভাই শেখ রোকনউদ্দিন বলেন, শান্তিলতাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে তাকে উদ্ধারের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করি। রফি ভাই একাধিকবার তার বাহিনী নিয়ে ওই রাজাকারদের আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন। এ সময়ে তারা তাকে হত্যা করে তার মাথা ফুলতলা বাজারে ঝুলিয়ে রাখে।