
এম সাইফুল ইসলাম
৩৪ বছর বয়সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শহীদ মোক্তার হোসেন। যুদ্ধের একেবারে শেষে এসে ডিসেম্বর মাসে মোক্তার হোসেনের হাত এবং চোখ বেঁধে পাকসেনারা তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তার আর খোজ মেলেনি। রাজাকার ক্যাম্পে ও মুসলিম লীগ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও তার আর কোন খবর পাওয়া যায় নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও খুজে ফেরে তাকে তার স্বজনরা।
শহীদ মোক্তার হোসেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার ছেলে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, বাবাকে দেখিনি, আদর ও ভালবাসা পাইনি, কোনদিন বলা হয়নি বাবা তোমায় ভালবাসি। তবে তার দেশের প্রতি ভালাবাসা আদর্শ ও তার প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা ভালোবেসে যাবো। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা শহীদ মোক্তার হোসেন ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ পুরুষ।
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ অঞ্চল হানাদার মুক্ত হয়। মোক্তার হোসেন পরবর্তীতে খুলনার দিকে রওনা হন। ১২ই ডিসেম্বর রূপসা নদীর পূর্বপাড়ে তার পরিচিত হক সাহেবের বাসায় অবস্থান করেন। সারারাত বাংলাদেশের পতাকাসহ বিজয় উৎসব পালনের জন্য নানা প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ১৩ই ডিসেম্বর সকালবেলা নৌকায় করে রূপসা নদী পার হয়ে খুলনা ঘাটে নামা মাত্রই রাজাকার জয়নাল পাকসেনাদের ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার হোসেনকে। মোক্তার হোসেনের সঙ্গে আরো যারা ছিলেন তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে মোক্তার হোসেনের দুই হাত এবং চোখ বেঁধে পাকসেনারা তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান। পরবর্তীতে, খবর পেয়ে রাজাকার ক্যাম্পে ও মুসলিম লীগ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনদের সকলের ধারণা খুলনার গল্লামারি বধ্যভ‚মিতে তাকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অজ¯্র লাশের সঙ্গে হয়তো তার লাশও মিশে গিয়েছে। লাশ আর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দু’দিন পরে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে সংবাদ পৌঁছালে ১৭ই ডিসেম্বর পরিবারের লোকজন খুলনায় এসে অনেক চেষ্টা করেও মোক্তার হোসেনের কোন সন্ধান পায়নি। সরকারী চলমান কাজের বিল, ব্যাংকে অর্থ, লকারে গচ্ছিত গহনা সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারটি খুবই অসহায় দিনাতিপাত করছিলো। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত শহীদ পরিবারগুলোর ২০০০ টাকার অনুদান পেয়েছিলেন এই পরিবারটি।
বীর শহীদের দুই কন্যা মাহফুজা খানম কচি ও মাকসুদা আক্তার রুনু এবং ছেলে মোঃ মফিদুল ইসলাম টুটুল। পিতা হারানো এই সন্তানদের কাছে বাবা মানে দেওয়ালে লাগানো একটি ছবি আর লাল-সবুজের এই বাংলাদেশে, এটাই তাদের অহংকার।
শহীদ মোক্তার হোসেনের সন্তান মোঃ মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, পিতা হত্যার শোক স্বাধীনতার বিনিময়ে পুষিয়ে নিয়েছি তারপরও এই ক্ষত ও প্রতিশোধের আগুন থেকেই যায়।
কিন্তু আমার বাবার আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের জন্য সামাজিকভাবে তিনি যে কাজগুলো করতেন বা তার যে দায়বদ্ধতা ছিল সেটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পূরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের বেসরকারি শহীদদের গেজেটে শহীদ মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার নাম রয়েছে। গোপালগঞ্জ স্টেডিয়াম এর পাশে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোক্তার হোসেন দাড়িয়ার নাম উল্লেখ আছে।