ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ৩৮ দিন পেরিয়ে গেলেও তা বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হাসপাতাল, মসজিদ, অ্যাম্বুলেন্স, গির্জাসহ সব স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। বিশেষ করে হাসপাতালগুলোর অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আক্রমণের জেরে গাজায় এরই মধ্যে কয়েক হাজার টন বোমাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। হাজার হাজার শিশু-নারী-পুরুষ হত্যা করেছে, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একাধিক প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও ভেটোর কারণে তা কার্যকর হয়নি। এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছে; কিন্তু কোনো পক্ষই যুদ্ধ থামার কথা বলছে না। তবে গাজায় যা ঘটছে তা যুদ্ধ নয়, এককথায় গণহত্যা। সামগ্রিকভাবে নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি তিনজনের একজনই শিশু। আহত মানুষের সংখ্যাও অস্বাভাবিক রকম বেশি। চিকিৎসক, জাতিসংঘের কর্মী, সাংবাদিক-কেউই হতাহতের তালিকা থেকে বাদ যাননি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হামলা নতুন নয়। তবে এখন যা ঘটছে, সময়ের দৈর্ঘ্যরে বিচারে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যার দিক থেকে এ হামলা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
পশ্চিমা শক্তি প্রকাশ্যে ইসরাইলের পক্ষ নিলেও বাস্তবতা হচ্ছে, মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে এমন নিষ্ঠুরতা এখন আর কেউ দেখতে চাইছে না। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সবচেয়ে বড় সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক হলেও সেদেশের কংগ্রেস থেকে শুরু করে প্রায় সব স্থানে এমন বর্বরোচিত ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। পশ্চিমের অন্যান্য দেশেও বিক্ষোভ হচ্ছে। পরিতাপের বিষয়, সামাজিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গাজার হতাহত নারী ও শিশুর মর্মান্তিক দৃশ্য বিশ্ববিবেককে নাড়া দিলেও তা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। ইসরাইলি বাহিনী এভাবে যদি অবাধে নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে ফিলিস্তিনের এই পবিত্র ভূমি একসময় গোরস্থানে পরিণত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আধুনিক ও উন্নত মানবসভ্যতার দাবিদাররা কি তবে ভবিষ্যতে অমানবিক ও বর্বর হিসাবে ইতিহাসে বিবেচিত হবে? বাংলাদেশ সরকার গাজায় যুদ্ধাপরাধের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। এভাবে বিশ্বের সব রাষ্ট্র অবিলম্বে গাজায় শান্তি স্থাপনে ঐকমত্যে পৌঁছে তা বাস্তবায়ন করবে, এটাই প্রত্যাশা।