ডেস্ক রিপোর্ট : ফিলিস্তিনের গাজায় এবার অনাহারী মানুষদের দুর্দশায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ইসরায়েলি বর্বর সেনাদের গুলির পাশাপাশি এবার পদপিষ্ট হয়েও প্রাণ হারাচ্ছেন অসহায় নারী ও শিশুরা।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হুড়োহুড়িতে পদদলিত ও শ্বাসরোধে অন্তত ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বুধবার সকালে খান ইউনিসে অবস্থিত বিতর্কিত জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধের জন্য হুমকি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।
গত মে মাসে ইসরায়েলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তুলে নেওয়া না হলে তাকে (করিম খান) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
পাশাপাশি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মানবিক নগরে স্থানান্তর পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খান ইউনিসে হতাহতদের বেশিরভাগই খাদ্য সংগ্রহে জড়ো হওয়া অসহায় সাধারণ মানুষ। তারা বলেছে, এই প্রথমবার ত্রাণকেন্দ্রে হুড়োহুড়ি ও শ্বাসরোধে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত এই বেসরকারি সংস্থা জিএইচএফ দাবি করেছে, ঘটনাটি সৃষ্টির জন্য হামাস-সংশ্লিষ্ট অস্ত্রধারী কিছু ব্যক্তি দায়ী।
তারা বলেছে, জনতার মধ্যে অস্ত্রধারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এক মার্কিন ঠিকাদারকে বন্দুক দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয়। জিএইচএফ জানায়, অন্তত ২০ জন পদদলিত হয়ে এবং একজন ছুরিকাঘাতে নিহত হয়।
তবে এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা জিএইচএফের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন, সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। এতে বিশৃঙ্খলা শুরু হয় এবং তাতে পদদলিত হয়ে অনেক মানুষ আহত হয়।
গাজার নাসের হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের জন্য ছুটে যাচ্ছিল, কিন্তু প্রধান ফটকটি বন্ধ ছিল। ফলে চাপ ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়।
ইসরায়েলি অবরোধে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকট চরমে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর একাংশ বারবার সতর্ক করে বলেছে, বহু মানুষ অনাহারে আছে।
এ পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে জটিলতা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গাজাবাসীর দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
জিএইচএফ সম্প্রতি ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গঠিত হলেও এর কর্মকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা চলছে। অনেকেই মনে করেন, এই সংস্থাটি প্রকৃত মানবিক চাহিদার পরিবর্তে ইসরায়েলের একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত