গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় কৃষকরা শীতকালীন সবজিতে আয় করেছেন ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
শীত মৌসুমে উৎপাদিত লালশাক, ডাটাশাক, পালংশাক, ঘি কাঞ্চনশাক, ধনেপাতা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বেগুন, টমেটো, মূলা পেঁয়াজকালি, শশা, খিরাই উচ্ছে, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গ্রীণব্রোকলি, কচু, কচুরলতি, ক্যাবেজ, স্কয়াশ বিক্রি করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১০ হাজার কৃষক ওই টাকা আয় করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান জানান। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে আমরা কৃষককে লাভজনক শাক-সবজি আবাদে উদ্বুদ্ধ করি। কৃষকরা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে উৎসবের আমেজে শাক-সবজির আবাদ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এছাড়া পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। তাই কৃষক শীতের শাক সবজির বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এ সবজি বিক্রি করে তারা লাভের টাকা ঘরে তুলেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, চলতি রবি মৌসুমে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আবাদি এবং পতিত ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শীতের শাক-সবজির আবাদ হয়। এখান থেকে ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন শীতের শাক-সবজি উৎপাদন করেছেন কৃষক। প্রতি কেজি সবজি গড়ে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের সবজি উৎপাদিত হয়েছে। এসব সবজি উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। খরচ বাদে সবজি বিক্রি করে কৃষকের লাভ হয়েছে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১০ হাজার কৃষক শীতের সবজি বিক্রি করে এ আয় করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা শীতের শুরুতেই কৃষককে শাক-সবজি উৎপাদনের পরামর্শ, বীজ, সার ও উপকরণ প্রদান করি। এগুলো পেয়ে কৃষক আবাদি ১ হাজার ২৭৭ হেক্টর ও আনাবাদি ২৩ হেক্টর মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শীতের আগাম সবজি আবাদ করেন। প্রথম দিক দিয়ে তারা শাক সবজির ভালো দাম পেয়েছেন।এ কারণে তারা শাক সবজি বিক্রি করে লাভের টাকা ঘরে তুলেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, শীতের শুরুতেই আমরা কৃষককে শীতকালীন সবজি আবাদে উদ্বুদ্ধ করি। তারা আমদের আহবানে সাড়া দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে শীতের সবজির বীজতলা করেন। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রথম তারা বিভিন্ন শাক আবাদ করের। শাক বিক্রি শেষে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বেগুন, টমেটো,মূলা পেঁয়াজকালি, উচ্ছে,বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গ্রীণব্রোকলি, কচু, কচুরলতি, ক্যাবেজ, স্কয়াশ, শশা, খিরাই জমিতে চাষাবাদ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাদের ক্ষেতে এসব সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষক লাভের টাকা ঘরে তুলেছেন। এসব শাক-সবজি থেকে কৃষক তার পরিবারের পুষ্টি মিটিয়ে বাড়তি শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন।
রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক অপূর্ব বিশ্বাস (৫২) বলেন, এ বছর ঘেরের আইলের ১ একর জমিতে টমেটো আবাদ করেছি। টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ টাকা দরে বিক্রি শুরু করি। এখন প্রতি কেজি টমেটো ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। এখন থেকে আমি আড়াই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। আরো অন্তত ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তারের পরামর্শে আমাগ জাতের টমেটো চাষ করে আমার ব্যয় হয়েছে ১ লাখ টাকা। এখন থেকে আমার কমপক্ষে লাভ হবে আড়াই লাখ টাকা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নকড়িরচর গ্রামের কৃষক হানিফ মল্লিক (৫০) বলেন, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে শীতের শুরুতে ভাসমান বেডে শাক করেছি। শাক সবজি বিক্রির পর লাউ, মিস্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। শাক সবজি চাষাবাদে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার ও ইউনিয়ন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার খোঁজখবর নিয়েছেন। মাঠে এসে প্রয়োজনী পরামর্শ দিয়ে ছেন। তাদের পরামর্শে শাক সবজির বাম্পার ফলন পেয়েছি। এগুলো বিক্রি প্রায় শেষ করেছি। এখনে থেকে আমার অন্তত ২ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এখন ভাসমান বেডে উৎপাদিত পেঁয়াজ কালি ও অন্যান্য সবজি বিক্রি করছি। এছাড়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে গ্রীস্মকালীন সবজি চাষবাদ করেছি। আমি সারা বছর ভাসমানসহ কৃষির অধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করি। বিগত ২৫ বছর ধরে বাজারে আমার সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সবজি আমি একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারি।তাই আমার লাভ বেশি হয়।
গোপালগঞ্জ শহরের বড় বাজারের সবজি বিক্রেতা আলিম কাজী বলেন, বাজারে শাক সবজির আমাদানী ভালো। ক্রেতারা সুলভ মূল্যে সবজি কিনতে পারছেন। আবার কৃষকও এসব সবজির ভালো দাম পেয়েছেন। সবজি বিক্রি করে আমাদেরও ভালো লাভ হয়েছে। তাই সবজি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতা আমরা সবাই খুশি।