
এম সাইফুল ইসলাম
শহীদ গোলাম হায়দার। চাকুরি করতেন পুলিশ বিভাগের উপ পরিদর্শক পদে। একাত্তর সালের অক্টোবর মাসে তাকে কর্মস্থল থেকে পাকবাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপরে আর ফেরত আসেননি তিনি। স্বাধীনতার এতদিনেও শহীদ গোলাম হায়দার ফিরে আসবে বলে বিশ^াস করে স্বজনরা। তাই আজও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।
শহীদ গোলাম হায়দারের বাবার নাম কুতুবউদ্দিন আহমেদ। মায়ের নাম হায়াতুন্নেছা। শহীদ হওয়ার পূর্বে তিনি রেখে যান ছয় সন্তান ও স্ত্রী আলেয়া বেগম। যারা বিশ^াস করতে পারছেনা যে তিনি মারা যেতে পারেন। তাই আজও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তার ফিরে আসার। একাত্তর সালে তিনি চূয়াডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে চুপ থাকতে পারেন নি তিনি। মুক্তিকামি জনতার সাথে তাদের মতো তিনিও সাড়া দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আহবানে। এসময় মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী এবং ই পি আর, পুলিশ সম্মিলিত ভাবে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। সম্মিলিত প্রতিরোধে তিনিও জড়িয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। স্বজনদের বর্ননানুযায়ী প্রতিরোধের এক পর্যায়ে অবাঙ্গালি প্রশাসককে গ্রেফতার করে মুক্তিকামি জনতা। এই অযুহাতে ১৪ই অক্টবর পাক হানাদার বাহিনী গোলাম হায়দারকে ধরে নিয়ে যায় । এ ঘটনায় তার সাথে আরও তিনজনকে তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনি। এরপরে তিনি আর ফেরত আসেননি। অবশ্য বাকি দুই জনের লাশ পাওয়া যায়।
সময় গড়াতে থাকে, দেশটাও স্বাধীন হয়ে যায়, তার ছয় ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীর অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। যার মধ্যে চার মেয়ে ও দুই জন ছেলে। অপেক্ষায় দরজার দিকে তাকিয়ে রয়। মানুষটার আর ফেরা হয় না। কোনোদিন লাশটাও আর পাওয়া যায় নাই। এমন লক্ষ স্মৃতি হয়তো মাটির নিচেই চাপা পড়ে আছে। তাদের আত্মত্যাগ হয়তো অজানাই রয়ে যাবে।
শহীদের বড় মেয়ে অধ্যাপিকা নাসরিন আক্তারের একাত্তর সালে বয়স ছিল দশ বছর। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। তবে যদি লাশ জানাযা ও দাফনের একটু সুযোগ পেতাম তাহলে আজ হয়তো মনে পড়লে কবরের কাছে ছুটে যেতে পারতাম।