By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় বিপদের আলামত সতর্কর প্রস্তুতি আছে কি?
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় বিপদের আলামত সতর্কর প্রস্তুতি আছে কি?
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় বিপদের আলামত সতর্কর প্রস্তুতি আছে কি?

Last updated: 2025/12/06 at 1:28 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 3 weeks ago
Share
SHARE

 সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল আনুমানিক দুপুর সোয়া বারটায় ভূমিকম্পে পুরো রাজধানী কেঁপে ওঠে। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.৫। পরের দিন ২৬ এপ্রিল দুপুর সোয়া একটার দিকেও আবার রাজধানী কেঁপে ওঠে। পরপর দুদিন ভূকম্পন হওয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের আভাস দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পর দুই-তিন দিনের মধ্যে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আবার ভূমিকম্প হয়। এটিকে বলা হয়, আফটার শক। গত ৫ মে শুক্রবার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ঢাকা শহর কেঁপে ওঠে। অনেকে ঘুমে থাকায় তা টের পায়নি। যারা টের পেয়েছে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছর ধরে ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। এসব ভূমিকম্প কোনোটা মৃদু, কোনোটা মৃদুর চেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয় ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি। রিকটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৭। এ ভূমিকম্পে পুরো দেশ কেঁপে ওঠে। আতঙ্কে মারা যান ৬ জন। গত ১৫ বছরে দেশ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ১৪১ বার। এসব ভূমিকম্পের মাত্রা মৃদু বা ছোট হলেও এগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চয় করে। তারা বলছেন, ভারত ও মায়ানমারে ভূগর্ভে যে টেকটোনিক প্লেট রয়েছে, তার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ নড়ে গেলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এই অঞ্চল ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে। ভারত এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেট এবং ভূতাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘত হানতে পারে। এ ধরনের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা।
দুই.
ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যা কখন হবে কেউ জানে না। ভূমিকম্প হবে, এমন পূর্বাভাস দেয়ার মতো কোন যন্ত্র আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। কেবল ভূমিকম্প হওয়ার পর কত মাত্রায় হয়েছে, তা মাপার যন্ত্র রিখটার স্কেল আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ভূমিকম্প হওয়ার আগমুহুর্তে প্রাকৃতিক কিছু লক্ষণ দেখে আঁচ করা যায়। যেমন, কুকুরের অস্বাভাবিক ডাক, পাখির অস্থির উড়াউড়ি দেখে অনুমান করা যায় ভূমিকম্প হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, তার আগে পশু-পাখির এমন আচরণ দেখা গেছে। আসলে আমাদের দেশে ভূমিকম্প হতে পারে, এমন ভাবনা খুব কম লোকই ভাবে। কুকুর অস্বাভাবিকভাবে ডাকছে কিনা বা পাখি বেশি উড়ল কিনা, তা সবার খেয়ালে থাকে না। বুয়েটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে এক লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ ৬ তলা বা তার চেয়ে উঁচু। ৭ মাত্রার ভূমিক¤প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে প্রায় ১৩ লাখ ভবন রয়েছে। নতুন ভবন ছাড়া আছে বহু পুরানো ভবন, যাদের অধিকাংশই ভূমিক¤পসহনীয় নয়। বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ৭৩ হাজার ভবন ধুলোয় মিশে যাবে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। ভূতত্ত্ববিদরা বহুদিন ধরেই বলছেন, ঢাকায় একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি ইতোমধ্যে সঞ্চিত হয়েছে। শেষবার এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৮৫ সালে। এরপর ১৩৭ বছর পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময়ে ভূ-অভ্যন্তরভাগে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে, তা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস। যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভূতত্ত্ববিদরা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে রয়েছে। বাংলাদেশ অবস্থান করছে ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মায়ানমারের টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে। ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেট দুটি ১৯৩৪ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে। অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়া বা ভূমিকম্পের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোনে রয়েছে। এগুলো হলো বগুড়া, রাজশাহীর তানোর, সীতাকু–টেকনাফ, হালুয়াঘাট ডাওকী, চট্টগ্রাম, সিলেটের শাহজীবাজার, রাঙামাটির বরকল এবং ভারতের ত্রিপুরা। ১৯১৮ সালে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। বুয়েটের মানমন্দিরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূমিকম্প হয়। এ সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূমিকম্প ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭-এর জুলাই থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৯০টি ভূ-কম্পন হয়। এর মধ্যে ৯টিরই মাত্রা ছিল ৫-এর উপরে। এগুলোর ৯৫ ভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায়, মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ সালের পর থেকে ভূমিকম্পের হার বাড়ছে। অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূতাত্ত্ববিদরা বলছেন, এসব স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চয় করছে। যেকোনো সময় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এই মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা শহরের অবস্থা কি হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। ২০০৩ সালে ইরানে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০০৫ সালে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মুজাফফারবাদের কাছের উৎপত্তিস্থলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় এক লাখ লোক মারা যায়। ২০১০ সালে হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৯ হাজারের বেশি মারা যায়। ভূমিকম্পের এসব মহাদুর্যোগের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই মাত্রায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে কী ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি অনুযায়ী, যদি রাত ২টায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে ঢাকা শহরে ৮৮ হাজার মানুষ মুহুর্তেই মৃত্যুবরণ করবে। ঢাকা মুহুর্তে ধ্বংসস্তুপ ও মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে।
তিন.
ঢাকা শহর যে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং এর ব্যাপ্তি বাড়ছে, তা বোঝার জন্য কোন বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। একজন অতিসাধারণ মানুষও স্বচক্ষে দেখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে ইরানের তেহরানের পর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিবেচিত। বলা যায়, এক ভয়ংকর ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ঢাকা শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে পারে। এর অন্যতম কারণ, ঢাকা শহরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মানার প্রবণতা কম। সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে ৭৮ হাজার। এর মধ্যে সরকারি ভবন ৫ হাজার। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৯৪টি ভবন জরুরি ভিত্তিতে ভেঙ্গে ফেলার ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। চি‎িহ্নত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, যেভাবে বিল্ডিং কোড না মেনে অনেক ভবন গড়ে উঠছে, তার বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এই যে অপরিকল্পিত ও নিয়মবর্হিভূতভাবে ভবন গড়ে উঠছে, এগুলো মানুষের সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বহুতল ভবন একটু বড় ধরনের ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাদের এ সংশয় যে ভিত্তিহীন নয়, তা ভূমিকম্পে অতীতে অনেক ভবন হেলে পড়া ও ফাটল ধরা থেকেই বোঝা যায়। যেসব ভবনে ফাটল ধরেছে বা হেলে পড়েছে, সেগুলোতে কোনো সচেতন মানুষ বসবাস করতে পারে না। এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলা ছাড়া আর কি উপায় আছে? তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এসব চকচকে-ঝকঝকে বহুতল ভবন নির্মাণ করে কি লাভ? অথচ নির্মাণের সময় যদি ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হতো, তাহলে এই ক্ষতি হতো না। এসব ভবন গড়ে তোলার সময় খরচ বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মালিকরা ভূমিকম্প সহনীয় প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা ভবনে ফাটল ধরলে ও হেলে পড়লে, পুরো অর্থই বিফলে যায়। অথচ প্রতি বর্গফুটে মাত্র ১০ টাকা বেশি ব্যয় করলেই ভূমিকম্প প্রতিরোধক ভবন গড়ে তোলা যায়। এমনিতেই রাজধানীর ভূগর্ভস্থ মাটির মান খারাপ ও নরম হওয়ায় ভূমিকম্প ছাড়াও ভবন দেবে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ছোট মাত্রার ভূমিকম্পে যেভাবে রাজধানীর ভবন দুলে উঠে, সেগুলোতে বসবাসকারী মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক সবসময় বিরাজ করা স্বাভাবিক। এমনিতে রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আছে। পরিবেশ দূষণে দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে। খোলা জায়গা খুবই অপ্রতুল। ভূমিকম্প হলে মানুষ যে বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেবে, সে জায়গা নেই বললেই চলে। এমনকি, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানের যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সড়ক নেই। আমরা দেখেছি, পুরনো ঢাকায় আগুন লাগলে ঘটনাস্থলে যেতে ফায়ার সার্ভিসকে কি কষ্টই না করতে হয়। সহজে সেখানে পৌঁছা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। দ্রুত গিয়ে যে আগুন নিভাবে তার আগেই সব জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যায়।
চার.
যখন কোন বড় ধরনের দুর্যোগের ঘটনা ঘটে, তখনই কেবল আমরা এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা কথা বলি। টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় এর প্রতিকার ও কি করণীয় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিস্তর আলাপ-আলোচনা করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলও নড়েচড়ে বসে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘটা করে বলতে শুরু করে, আমরা এই করছি, সেই করছি। তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই সব উপদেশ ও পরামর্শ ধীরে ধীরে থেমে যায়। আর কোন খবর থাকে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আরেকটি দুর্যোগের মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত যেন টনক নড়বে না। অনেকটা এ মানসিকতা গড়ে উঠেছে, এ যাত্রা তো বেঁচে গেলাম, পরেরটা পরে দেখা যাবে। অথচ এখনই যে সচেতনতা ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, এ বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। ঢাকা শহর যে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ভূমিকম্প মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রানা প্লাজা। এক রানা প্লাজার ভেতরে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার ও সবকাজ শেষ করতেই সময় লেগেছে ২৩ দিন। আর একসঙ্গে কয়েক হাজার ভবন ধ্বসে পড়লে কী অবস্থা হবে, তা কল্পনা করা যায় না। তাই জরুরী ভিত্তিতে রাজধানীতে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, সেগুলো ভেঙ্গে ফেলা অপরিহার্য। পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেসব ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি, সেগুলোতে রেট্রোফিটিং-এর মাধ্যমে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালা ও ভবন মালিকদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে এবং তা কার্যকর হয়েছে কিনা সরেজমিনে তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে এখন থেকেই দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে। নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে ঘরের দুই দেয়ালের সংযোগ স্থলে কিংবা যেখানে পিলার আছে সেখানে অবস্থান নিতে হবে। এছাড়া শক্ত খাটের নিচে যা ছাদ ধসে পড়লে ঠেকাতে পারে তার নিচে আশ্রয় নিতে হবে। আগে থেকে শুকনো খাবার, পানি ও টর্চ লাইট রেখে দিতে হবে। ভূমিকম্প দীর্ঘ হলে বৈদ্যুতিক লাইন ও গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিতে হবে। ভূমিকম্প শুরু হলে ভবনের বাইরে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করলেও ভূমিকম্প মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করেনি। ফলে সরকারকে ভূমিকম্পের পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করতে হবে। যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি কিংবা ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হয়নি, সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ও ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে।
প্রাচীনকাল থেকে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের সীমাহীন চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বহু লোকের আজও এ অন্ধবিশ্বাস মনের মধ্যে সদা জাগ্রত রয়েছে যে পৃথিবীটা চারটা বিশালাকৃতি হস্তীর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং ওই হস্তীরা যখন গা নাড়াচাড়া করে ওঠে তখনই পৃথিবীটা কেঁপে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। অবশ্য এরকম ধারণার আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অনেকে বলেন এসব কুসংস্কার। ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রধান কারণ হল পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের শিলাখ-ের স্থিতিস্থাপকীয় বিকৃতি। তদুপরি বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প সৃষ্টির অন্য এক কারণও উদ্ভাবন করেছেন, সেটা হল-জলাশয় বেষ্টিত কম্পন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের শিবাজিসাগর জলাশয়ের সন্নিকটবর্তী অঞ্চলে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ৬.৫ রিখটার স্কেলের মাপে বেশ কয়েকটা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিশ্বের বেশ কিছু জলাশয় অঞ্চল যেমন- ভাগরাও লেক (সুইজারল্যান্ড), মারাথান লেক এবং ক্রেমাস্টা লেক (গ্রিস), গ্র্যান্ড ভেল লেক, (ফ্রান্স), লেক মিয়াড (যুক্তরাষ্ট্র), কার্ভিরা লেক (রোডেসিয়া-জিম্বাবুয়ে) ইত্যাদি এসব অঞ্চলে এ রকম ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির ফলে চুনাপাথরে দ্রবণ ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট গহ্বরে স্তর পতনের ফলে ভূমিকম্পের উৎপত্তির সম্ভাবনা থাকে। অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ ফিলিপাইনস অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। ১৮৮৩ সালে জাভার ক্রকাটোয়ায় অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে ঘন ঘন ভূকম্পন হয়েছিল তবে বেশিরভাগ ভূমিকম্পের মুখ্য কারণ যে ভূ-অভ্যন্তরের সংঘটিত ক্রিয়াকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সে কথা আজ প্রায় সুনিশ্চিত।
১৯০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিকোতে সংঘটিত প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বিজ্ঞানী মিঃ এইচএফ রিড শিলাস্তরের স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, যখন শিলাস্তরের নিজস^ প্রতিরোধী ক্ষমতার ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি হয় তখনই সে শিলাস্তর সঞ্চিত চাপ মুক্ত করতে শিলাচ্যুতির মাধ্যমে ভূ-আন্দোলনের সৃষ্টি হয় এবং তখনই ভূমিকম্পের উৎপত্তি ঘটে। এভাবে ভূস্তরে ঘটা বিচ্যুতির জন্যই ক’বছর আগে ভারতের গুজরাটে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হয় বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন।
ভূমিকম্প উৎপত্তির কারণ অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা সক্ষমতা লাভ করেছেন এবং সে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত ভূমিকম্প মাপক যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র (epicentre) নির্ণয় সম্ভবপর হয়ে উঠেছে এবং এর দ্বারা সম্ভাব্য ভূমিকম্পের স্থল বা বলয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ভূকম্পের এ বলয় পৃথিবীতে দুটো অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে আছে যেমন- (১) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পূর্ব উপকূলের রকি, অ্যান্ড্রিজ ইত্যাদি পর্বত শ্রেণী অঞ্চল এবং পশ্চিম উপকূলের জাপান, ফিলিপাইন ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ, কেরিবিয়ান উপকূল, নিউগিনি, নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে (Circum Pacific Belt সংক্ষেপে CPB)। (২) ভূমধ্যসাগরের চারদিকে আল্পস ককেসাস ইত্যাদি পর্বতের আশপাশে, হিমালয় পর্বতমালার চারপাশ, মায়ানমার, নেপাল, আসামসহ কাশ্মীর ও পশ্চিম ভারত এবং পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত।
ভূ-তাত্ত্বিকরা ভূমিকম্পের আন্তর্জাতিক বলয়ের ও ভূমিকম্পের প্রাবল্যের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের পাঁচটি ম-লে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হল (১) জম্মু কাশ্মীরের এক বৃহৎ অংশ (২) হিমাচল প্রদেশসহ মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের একাংশ (৩) উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম পাহাড়ি অঞ্চল (৪) বিহার, সিকিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহ (৫) আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং বাংলাদেশ।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস : ভূমিকম্পের সম্ভাব্য স্থান নির্ণয়ে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হলেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদান ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণে এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম হননি। তবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কতকগুলো পন্থার উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো হল (ক) ছোট ছোট মধ্যম আকারের ভূমিকম্প বরাবর সংঘটিত হওয়া (খ) প্রাকৃতিক ও গৌ তরঙ্গের গতিবেগের ব্যবধান (গ) পূর্বে সংঘটিত হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের সময়ের ব্যবধান (ঘ) ভূমিকম্পের পূর্বে নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফাটলের সৃষ্টি এবং শিলাস্তরের আয়তন বৃদ্ধি (ঙ) ভূমিকম্পের পূর্বে জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণ এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যানুসারে ভূমিকম্পের পূর্বে ভূগর্ভে অতি মৃদুকম্পন সঞ্চারিত হয় যা শুধুমাত্র সংবেদনশীল পশুপক্ষীরা অনুভব করতে পারে। তাই ওই সময় ওদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া, ভূমিকম্পের পূর্বে পানিপৃষ্ঠের পরিমাপের বিভিন্ন তারতম্য ঘটে। এসব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৭৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের হেইচেঙ্গে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ৪০ শতাংশ উচ্চমানের ভূমিকম্পের পূর্ব-প্রঘাত অনুভূত হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আসামে সংঘটিত প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পূর্ব-প্রঘাত অনুভূত হয় ১২ আগস্ট। চীনের হেইচেঙ্গে সংঘটিত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সঠিক হলেও ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই সে দেশের তাঙ্গশানে সংঘটিত বিশ্বের বৃহত্তম প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়নি। সে ভূমিকম্পের পরিমাপ ছিল ৭.৮ রিখটার স্কেল, এতে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। সরকারি মতে, সাত লক্ষ পাঁচ হাজার। সুদীর্ঘকাল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সম্পর্কীয় গবেষণা চালাচ্ছেন এ রকম ত্রিশ জনের একটি গোষ্ঠীর সদস্য ইতালির ত্রিয়েস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পীয় বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট ভূকম্পবিদ মিঃ পাঞ্জার অভিমত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে ‘ভূমিকম্পের বিষয়ে এখনও আমরা প্রাক- নিউটন স্তরেই রয়েছি।’
১৮৮০ সালে জন মিলন নামের একজন বাস্তুকার ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র (Seismograph) উদ্ভাবন করেন এবং তখন থেকেই ভূমিকম্প নিয়ে বৈজ্ঞানিক চর্চার উদ্ভব হয়। বিগত শতাধিক বছর যাবৎ ভূমিকম্পের পূর্বলক্ষণ সমূহ ও পূর্বাভাস নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালের পরও একটি মধ্যম এবং ছয়টি বৃহৎ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ১৯৬০ সালে গামবেল নামের জনৈক বিজ্ঞানী একটা নতুন পরিসংখ্যান তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন এবং তাতে দেখা যায় বৃহৎ ভূমিকম্পের সংখ্যা ক্ষুদ্র ভূমিকম্পের চেয়ে অনেক কম। গুটেনবার্গ নামের একজন বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের সংখ্যা এবং রিখটার স্কেলে দেখা ভূমিকম্পের মাত্রার মধ্যে একটা সমীকরণ উদ্ভাবন করেন যার দ্বারা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কিছুটা সম্ভবপর হয়।
১৯৭৯ সালে রিকিটেক নামের আরেক বিজ্ঞানী একটা পন্থা উদ¢াবন করেন যার সাহায্যে ভূমিকম্পের ঘুরে আসার সময় নির্ণয় করা যায়। ওই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ৭ রিখটার স্কেলের উপরে সংঘটিত ভূমিকম্পে আক্রান্ত অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা বা পূর্বাভাস দেওয়া কিছুটা সম্ভবপর হয়েছে। ১৯৬৪ সালে জাপানের নিগটা অঞ্চলে একবড় ভূমিকম্প হয়েছিল, যার রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭.৫। টুসনেজি বিকিটেকি নামের জনৈক জাপানি বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেছেন বিশ বছর যাবৎ ওই স্থানের উচ্চতা ক্রমে বেড়ে বেড়ে হঠাৎ কমতে শুরু করেছিল এবং সে সময়েই ওই স্থানে ভূমিকম্প সংঘটিত হল। ওই বিজ্ঞানীর মতে, ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বে দুই ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ওই দুটি তরঙ্গের সাধারণ অনুপাত হল ১:৭৩। কিন্তু ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার বহু আগে থেকেই এ অনুপাত কমতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু মাউন্টেন লেক নামের একটি অঞ্চলে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন কেনীয়বাসী মিঃ যশ অগ্রবাল এবং সে পূর্বাভাস অনুসারে ১৯৭৩ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় রিখটার স্কেলে ২.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। অগ্রবাল তখন আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। তিনি যে পদ্ধতিতে ওই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সে পদ্ধতি ১৯৬৯ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। ওই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে পরে California Institute of Technology-i এক দল বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়ার রিভার সাইড নামক স্থানে একটা ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং সে পূর্বাভাস অনুসারে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণী মতে ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মাত্রা সঠিক হয়নি।
ভারতের হায়দরাবাদের National Geophysical Research Institute–এর সঞ্চালক ডঃ হর্ষকুমার গুপ্তা একজন সহযোগীর সাহায্যে শিলং অঞ্চলে ভূমির গতিবেগের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৮০ সালে ভবিষ্যদ্ববাণী করেছিলেন যে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের ভূমির আয়তন প্রসার ঘটার কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে একটা বৃহৎ ভূমিকম্প ঘটতে পারে। তবে তার সঠিক সময় ক্ষণ দিতে পারেননি। ওই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় চার বছর পর ১৯৮৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রিখটার স্কেলে ৬.১ মাত্রার এক ভূমিকম্প উত্তর-পূর্ব ভারতকে কাঁপিয়ে তুলেছিল এবং ওই ভূমিকম্পের প্রাবল্য ছিল আসামের কাছাড় এবং বাংলাদেশের সিলেট জেলায় সর্বাধিক। ঐ সময় এসব জেলায় বেশ কিছু লোকের মৃত্যু হয় এবং অনেক লোক গৃহহারা হয়। পরে ডঃ হর্ষকুমার গুপ্তার গবেষণার প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল (epicentre) ছিল ১৯৮০ সালে তাঁরই উল্লেখিত মেঘালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের ওই অঞ্চলটি। ১৯৭৭ সালে (World Congress on Engineering Seismology) ভারতের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ জয়কৃষ্ণ ঘোষণা করেন, আগামী দশকে উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি বৃহৎ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। ১৯৭৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলুতে অনুষ্ঠিত Strong Motion Instrumentation সম্পর্কীয় আন্তর্জাতিক কর্মশালায় আসামও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পৃথিবীর ছয়টি বৃহৎ ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আগস্ট ২০০১ সালের আমেরিকার ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় আমেরিকা ভারতের ঐ তিনজন বিশিষ্ট ভূ-তত্ত্ববিদের একটি যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বত্র সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবনের কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে যাতে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের করাল গ্রাস থেকে জনজীবন ও সম্পত্তি কিছুটা হলেও রক্ষা করা যায়। ওই সমীক্ষার রিপোর্টটি তৈরি করেন আমেরিকার কলোরাডো ও বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ভূতত্ত্ববিদ, যথাক্রমে রগার বিলহাস ও পিটার মলনার এবং ভারতের বাঙ্গালোরের আইআইএ-র বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ প্রফেসর বিনোদ গোড়। ওই ভূতত্ত্ববিদরা সুদীর্ঘকাল হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বত শিখরে আরোহণ করে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেন, হিমালয়ের শিলাস্তরের পে-টের দুটো সীমার মধ্যে ফাঁকের (ঝবরংসরপ মধঢ়) কোনও বিচ্যুতি ঘটেনি বিগত দুইশ বছর সময়ের মধ্যে তাই ভূতত্ত্ববিদরা অনুমান করেন হিমালয়ের শিলাস্তরের বিচ্যুতি ঘটতে চলেছে অতি নিকট ভবিষ্যতে এবং তখন এক ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে গোটা হিমালয় বলয়ে যা বিগত দুইশ বছরের মধ্যে সংঘটিত ভূমিকম্পের প্রাবল্যের চেয়েও হবে প্রায় দশ গুণ বেশি। প্রায় পাঁচ কোটি জনবসতি অঞ্চলজুড়ে এ ভূমিকম্পের প্রসার ঘটবে। রিপোর্টে প্রফেসর বিনোদ গোড় বলেন, ‘This is not a prediction, it is an assessment based on logical assumptions and buttressed by arguments based on field data.’ ওই ভূতত্ত্ববিদরা যদিও বিগত দুইশ বছর সময়ের মধ্যে না ঘটা এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতার কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন কিন্তু কবে সে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে সে বিষয়ে সঠিক কোনও সময়কাল দিতে সক্ষম হননি।
পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বহু প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। মানব সভ্যতা সৃষ্টি পরে খিস্টপূর্ব ৭০০ সালের পরবর্তীকালে প্রায় ১,০০০টা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যায়। ৩৪২ সালে তুরস্কর আন্টাকিয়ায় এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৪,০০০। সর্বাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে ১৫৫৬ সালের চীনের চাংচি অঞ্চলে সংঘটিত এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে। মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ। ১৯২০ সালে জাপানে সংঘটিত এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মারা যায় ২ লক্ষ লোক। ১৯২৩ সালে জাপানে সংঘটিত আরেক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লক্ষ লোকের এবং ধ্বংস হয় প্রায় পাঁচ লক্ষেরও অধিক ঘরবাড়ি।

জন্মভূমি ডেস্ক December 7, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article শরণার্থীদের প্রতি সবাই মানবিক হতে হবে
Next Article বদলে যাচ্ছে‌ উপকূলের অর্থনীতির চাকা, স্বাবলম্বী হচ্ছে হাজার হাজার বেকার যুবক

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
বাগেরহাট

শরণখোলায় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 hours ago
খুলনা

পাইকগাছা সড়ক কাজে অনিয়ম, সংবাদ প্রকাশের দৌড়ঝাঁপ শুরু

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 hours ago
সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

উপকূল মানুষ বৈষম্যর শিকার ‌‌কেন?

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ খাবার পানিতেও বৈষম্যর শিকার

By জন্মভূমি ডেস্ক 16 hours ago
সাতক্ষীরা

ক্ষতি গরিবের, লাভ ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 day ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?