
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
ক্রমে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা তার শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনের ভয়ংকর রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন- নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাণ্ডব চালাবে ‘মোখা’।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখা আজ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এতে জলোচ্ছ্বাসসহ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার হতে পারে। কক্সবাজারে ১০ নং মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র আমরা পাই তাতে বোঝা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এখনো অনেকে যথাযথভাবে আমলে নেন না, যদিও সার্বিকভাবে এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।
যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই সরকার উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুরক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়, এটি ইতিবাচক।
এক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষকেও আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নিকট অতীতে ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় দুর্বল বাঁধের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় যে মানের বাঁধ রয়েছে তাতে অনুমান করা যায়, যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বাঁধ ভেঙে কিছু এলাকা প্লাবিত হবে। কাজেই উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানার পর টানা কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মোখার আঘাতে দেশের কোনো স্থানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা দ্রুত মেরামতের প্রস্তুতি নিতে হবে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। করোনার কারণে দেশের শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন। তাদের কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে দ্রুত তা পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।
যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। ইয়াস ও আম্পানের ক্ষেত্রে আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও মাত্রা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া।