সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ঘূর্ণিঝড় রেমাল গেলেও সাতক্ষীরা উপকূলে রয়ে গেছে তার ক্ষতচিহ্ন। ঝড়ের তাণ্ডবে জেলার ২৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে নোনা পানি। এতে নষ্ট হয়েছে মাঠের ফসল। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ ও ২ এর আওতাধীন ৬৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ২৬ মে রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল। ফুঁসে ওঠা নদীর গর্জন করা ঢেউ আঁচড়ে পড়ে উপকূল রক্ষা বাঁধে। এতে ক্ষতবিক্ষত হয় সাতক্ষীরার উপকূল রক্ষা বাঁধ। দুর্বল হওয়ার পরও উপকূলীয় এলাকায় পরদিন (সোমবার) ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঁধের কঙ্কাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। এবার ২০২৫ সালে আসছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও মন্তা এর ক্ষয়ক্ষতিয় রাতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জান মাল ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন,। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদক কে বলেন ঘূর্ণিঝড় দুটি কোন দিক থেকে যাবে এখনো সর্বশেষ এর অবস্থান নির্ণয় করা না গেলেও আমরা এর জন্য উপকূলে কড়া নজরদারি রেখেছি এবং উপকূলীয় বসবাসরত মানুষের সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছি,।
গাবুরা ইউনিয়নের এসএম ওয়ায়েজ কুরুনী বলেন, ষাটের দশকের বেড়িবাঁধ প্রায় অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে সামান্য ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে উপকূলের মানুষ। আমরা ঝড়কে ভয় পাই না, ভয় পাই বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়াকে। উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে গত কয়েক বছরে হাজারো পরিবারকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। এবারও ঝড়ে ভেঙেছে বাঁধ। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল দীর্ঘ ৬ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে সাতক্ষীরা উপকূল অতিক্রম করে ও নদ-নদীতে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে আমার এলাকার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে আশপাশের বহু গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে। এভাবে বাঁচা যায় না। আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাবনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে এসব ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করতে না পারলে নদীর তীরবর্তী মানুষজন ঝুঁকিতে থাকবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছিলাম তারা বেশকিছু এলাকা সংস্কার বস্তা ডাম্পিং করেছেন কিন্তু সামনে দুটি ঘূর্ণিঝড় আমার ইউনিয়নের এখনো অনেক জায়গায় অরিক্ষিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কে সেগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ। প্রতি বছর খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভাঙনে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলহানির পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়। কার্যত কোনো লাভ হয় না। ভাঙন তীব্র হওয়ায় তারা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে রক্ষা করতে হলে জরুরিভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার করার প্রয়োজন।
সাতক্ষীরা জেলা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী জানান, ১৯৬০ সালের দিকে মূলত উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের বহু নদী-খাল মরে যায়। শুধু তা-ই না, এসব নদীর বাঁধ ভেঙে প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল যেমন নষ্ট হয়, তেমনি বহু মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে গৃহহীন হয়ে যায়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আমাদের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার মধ্যে আমরা বেশ কিছু জায়গায় সংস্কার করেছি কিন্তু আবার নতুন নতুন জায়গায় ফাটলসহ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেগুলোর দিকে দুটি ঘূর্ণিঝড় আছে সে কারণে আমরা নজর দাড়ি রেখেছি,,
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের আওতাধীন ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১২.৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তা থাকে অনেক বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল প্রায়ই জাগা আমরা সংস্কার ও বালুবাস্তা ডাম্পিং করেছি কিন্তু আবার নতুন নতুন জায়গা ফাটল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলে সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন ঘটার আওতায় এখনো বিশ কিলোমিটার এর মত রাস্তা খারাপ রয়েছে সেগুলোর অনেক সংস্কারের কাজ চলমান আছে।