সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র আঘাতের ১৬ বছর পরও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি আজও। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হলেও সেসবের বাস্তবায়নকাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে এ অঞ্চলে দুর্যোগের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর এখন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাতের আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (সুপার সাইক্লোন) ‘সিডর’-এর দুই বছরের মধ্যে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয় ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এবং ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে। টানা ১৫ ঘণ্টার ঝড় ও ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম লবণ-পানিতে তলিয়ে যায়।
বহু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ফসলের খেত ও মাছের ঘের ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নিহত হন শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। হাজার হাজার গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। উপকূলজুড়ে অর্থনীতিতে পড়ে বিরূপ প্রভাব। নতুন করে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা উপকূলবাসীকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় জনপদে বসবাসকারী জনসাধারণ। কারণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধের ওই অংশ ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে না। এমনকি আগামী বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে এখানকার ২৭টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো হলো বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গাবাটি, দাঁতিনাখালী; আটুলিয়া ইউনিয়নের বড় কুপট, খোন্তাকাটা ও সরদারবাড়ী; পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাঠি, ঝাপা, চাউলখোলা ও পশ্চিম পাতাখালী; কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালির মমিননগর; কৈখালী ইউনিয়নের মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী ও জয়াখালী হুলা; মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মৌখালী গাজীবাড়ি মসজিদসংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম ও সিংহরতলী; গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাগড়ামারি ও কালিবাড়ী প্রভৃতি। আগেও পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গাবাটি এবং দাঁতিনাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দাবি করছেন, উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পাউবো কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল পাওয়া যায়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২১ সালে এবং ২০২২ সালে একনেকে পাস হয়। এই মেগা প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট প্রকল্প নেওয়া হয়। পাউবোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আবারও ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধের ওই অংশ ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে না। এমনকি আগামী বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে এখানকার ২৭টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো হলো বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গাবাটি, দাঁতিনাখালী; আটুলিয়া ইউনিয়নের বড় কুপট, খোন্তাকাটা ও সরদারবাড়ী; পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাঠি, ঝাপা, চাউলখোলা ও পশ্চিম পাতাখালী; কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালির মমিননগর; কৈখালী ইউনিয়নের মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী ও জয়াখালী হুলা; মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মৌখালী গাজীবাড়ি মসজিদসংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম ও সিংহরতলী; গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাগড়ামারি ও কালিবাড়ী প্রভৃতি। আগেও পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গাবাটি এবং দাঁতিনাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দাবি করছেন, উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পাউবো কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল পাওয়া যায়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২১ সালে এবং ২০২২ সালে একনেকে পাস হয়। এই মেগা প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট প্রকল্প নেওয়া হয়। পাউবোর অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও আবারও ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, শুধু মেগা প্রকল্প নয়, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগ মুহূর্তে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার ঝুঁকি কমছে না, বরং বাড়ছে।
টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। শ্যামনগরের জলবায়ুকর্মী হাফিজুর রহমান জানান, আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতো উপকূলীয় এলাকা। কিন্তু এখন দুর্বল বেড়িবাঁধ ও বাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে সাগরে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে নতুন করে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির খবরে উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে এখনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে মনে করেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত ১৫ মে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয় সব সময় নজরদারিতে রাখবে।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (শ্যামনগর পওর উপবিভাগ) মো. ইমরান সরদার। তিনি বলেন, বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও মন্তা সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ইউএনও শ্যামনগর

Leave a comment