জন্মভূমি ডেস্ক : ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আব্দুল খালেককে (৬৫) হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা উদ্ধার এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার (৩০ জুন) দুপুরে র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের দিন ভোরে জেলার তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে সড়কের পাশের ডোবায় একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে মরদেহটি ময়মনসিংহ নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চায়নামোড় এলাকার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে আব্দুল খালেকের বলে শনাক্ত করা হয়। তিনি কামারিয়া ইউনিয়নের চর ফরিদপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. সোহাগ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার তারাকান্দা থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে র্যাবের একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তারাকান্দা থানাধীন জয় বাংলা বাজারের আলম খাঁ মোড় এলাকা থেকে মো. শহিদুল ইসলাম রতন (২৪) ও সুমন মিয়াকে (২৩) গ্রেপ্তার করে। রতন বিসকা ইউনিয়নের কাকনীকোনা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এবং সুমন সদর উপজেলার চরখরিচা গ্রামের মো. ইউসুব আলীর ছেলে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে র্যাব-১৪ অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, সুমন ও রতন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতো। নিহত আব্দুল খালেক রতন ও সুমনের গ্যারেজে নিজের গাড়ির কাজ করতেন। গত বুধবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে খালেককে ডেকে নেন রতন ও সুমন। রতন নিহত আব্দুল খালেকের পরিচিত হওয়ায় প্রায় সময় তার অটোরিকশায় বাড়িতে যাতায়াত করতেন। রতন এবং সুমন ঋণগ্রস্ত হওয়ায় তারা অটোরিকশাটি ছিনতাই করে তাদের ঋণ পরিশোধ করার পরিকল্পনা করেন এবং পরিকল্পনা মোতাবেক রতন চালক আব্দুল খালেককে ডেকে নেন। রতন নিহতের পরিচিত হওয়ায় ছিনতাইয়ের পর ঘটনা প্রকাশ হতে পারে ভেবে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক জয় বাংলা বাজার থেকে রশি কিনে নেন। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি রতন পথে কয়েক পুরিয়া গাঁজা ক্রয় করেন এবং নিহত আব্দুল খালেককে সেবন করতে প্রলুব্ধ করলে তিনি গাঁজা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে রতন আব্দুল খালেককে অটোরিকশার পেছনে বসায় এবং সুমন অটোরিকশাটি চালিয়ে কামারিয়া গ্রামের ফাঁকা জায়গায় যায়। এরপর রতন এবং সুমন মিলে আব্দুল খালেককে প্রথমে হাত দিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় তারা ক্রয়কৃত রশি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নিহতের গলায় উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারে।
এরপর সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগীকে রাস্তার পাশে ডোবায় ফেলে অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নিয়ে চলে যায়। আসামিদের তারাকান্দা থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাব অধিনায়ক।
অপরদিকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানায়, অটোরিকশা চালক আব্দুল খালেক হত্যার ঘটনায় সদর উপজেলার চরখরিচা ও জয়বাংলা বাজার এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- চর আনন্দীপুর গ্রামের সোহেল মিয়া (৩২), মো. জামান (২৯) ও চর খরিচা গ্রামের হযরত আলী (৩৫)। এর মধ্যে জামান হত্যায় জড়িত এবং সোহেল অটোরিকশার ব্যাটারি বিক্রি করে হযরত আলীর কাছে। ওই সময় ছিনতাইকৃত অটোরিকশার চারটি ব্যাটারি ও নগদ ২৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত হত্যায় মোট চারজন আসামি সরাসরি অংশ নেয়। মাস্টারমাইন্ড একজন এখনও পলাতক রয়েছে, তাকে ধরতে অভিযান চলছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত