শেখ আব্দুল হামিদ : প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খুলনার একটি সরকারি হাসপাতালে গত ২০১০ সালে ডায়ালাইসিসের দশ শয্যা নিয়ে কিডনি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। কিডনি রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে নগরীর সাতটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের শয্যা রয়েছে ১৩৮টি। কিডনি রোগীদের পরিসংখ্যান জেলায় না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, ১৪ বছরে রোগী বেড়েছে কয়েক গুণ। আর ব্যয়বহুল এ রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকেই।কিডনি বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করার পাশাপাশি চিকিৎসকের প্রিসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবনে বাড়ছে কিডনি রোগ।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে আসা রোগী মো: খোরশেদ আলম বলেন, ডায়ালাইসিস যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া এখন বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। ৭২ বছরের এ বৃদ্ধ দীর্ঘ আট বছর ধরে ডায়ালাইসিস করে চলেছেন। তার দুটি কিডনিই এখন বিকল হয়েছে। বেঁচে তাকার লড়াইয়ে সর্বচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে চলেছেন। এই চিকিৎসা করাতে গিয়ে জীবীকার বাহন, গবাদি পশু ও জায়গা-জমি যা ছিল সব বিক্রি করে নিঃস্ব তার পরিবার। এখন চিকিৎসার জন্য সপ্তাহে দুবার বাগেরহাট থেকে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আসতে হয়।
খোরশেদ আলম ছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত বহু রোগীই খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে থাকেন। শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ২০১০ সালে ডায়ালাইসিসের দশটি মেশিন নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়।
সুত্রমতে, সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসে খরচ পড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে রোগীর তুলনায় শয্যা সংখ্যা নিতান্তই কম হওয়ায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ব্যয় বাড়ছে ৬-৭ গুণ। আর ব্যয়বহুল এই কিডনি চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
খুলনার দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সের আবুল হোসেন। দীর্ঘ ৬ বছর হলো দুটি কিডনি বিকল তার। সেই থেকে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন। এখন সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস নিতে হয় তাকে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকাসহ খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। চিকিৎসার পেছনে খরচ মেটাতে গিয়ে স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার এবং গ্রামের বাড়ির পৈত্রিক জায়গা জমিসহ বিভিন্ন সহায় সম্বল বিক্রি করে দিয়েছেন। কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া এখন আর কোনো চিকিৎসা নেই। আর কিডনি প্রতিস্থাপনে ব্যয় মেটানোর সামর্থও তার নেই।’
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইনামুল কবীর বলেন, ‘ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করার পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবনে বাড়ছে এ রোগ। একমাত্র সচেতনতাই পারে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে।’
২০২৩ সালে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের সেশন চলে ১৪ হাজার ১৯টি, এর মধ্যে রোগী মারা গেছেন ৯২ জন। আর কিডনি রোগের চিকিৎসা নিয়ে ছিলেন, প্রায় ৯ হাজার রোগী।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মহাসীন আলী ফরজী বলেন, কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে এ রোগের চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও প্রয়োজন। আলাদা শয্যারও প্রয়োজন আছে। জরুরী কোন রোগী এলে বিশেষায়িত হাসপাতালে যাবার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে বাড়ছে কিডনি রোগ
Leave a comment