
বাগেরহাট প্রতিনিধি: সম্প্রতি সময়ে অপরাধ কর্মকান্ডে আলোচিত হয়ে ওঠা বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় বখাটেদের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত আব্দুল জব্বার শেখ হত্যাকান্ডের মুলহোতাসহ ৩ জন কে গ্রেফতার করেছে খুলনা র্যাব সদস্যরা। হত্যাকান্ডের ৭২ ঘন্টার মধ্যে খুলনা র্যাব-৬ (সদর কোম্পানি) একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর কোতয়ালীর শাখারিগাতী এলাকা ৩ জন কে আটক করেছে। এরা হলো হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী দেলোয়ার হোসেন ওরফে সবুজ মুন্সি(৩০), তার ভাই দ্বীন ইসলাম ওরফে আকাশ মুন্সি (২৬) ও তাদের পিতা সাত্তার ওরফে ডাবলু মুন্সি(৫৫)। এদের বাড়ী চিতলমারী উপজেলার গোড়া নালুয়া গ্রামে। গ্রেফতারকৃতরা র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। খুলনা র্যাব-৬ এর মিডিয়া সেল থেকে মঙ্গলবার দুপুরে দেয়া এক মেইল বার্তায় জানানো হয় বাগেরহাট চিতলমারী উপজেলায় মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরীকে স্থানীয় বখাটে দ্বীন ইসলাম মুন্সি প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত ২৫ এপ্রিল ওই কিশোরী দর্জি বাড়ি থেকে বোরকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বখাটে দ্বীন ইসলাম বিভিন্ন ধরণের কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে। বখাটে দ্বীন ইসলামের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্লীলতাহানী করে ও চড় থাপ্পর মারে। কিশোরী বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি পরিবারের কাছে জানায়। এতে কিশোরীর চাচাতো ভাই জব্বার শেখ (৩৫) বখাটে দ্বীন ইসলামের বাড়ীতে গিয়ে উক্ত ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করলে আসামীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়। গত শুক্রবার রাতে জব্বার শেখ ও তার শ্যালক রাজিব শেখ চিতলমারী কলিগাতী বাজার থেকে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ওঁত পেতে থাকা বখাটে আসামী দ্বীন ইসলাম, তার ভাই দেলোয়ার ও পিতা ডাবলু মুন্সিসহ তাদের সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়িভাবে কুপিয়ে জব্বার শেখ ও রাজিব শেখকে গুরুতর জখম করে। জব্বার শেখ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামী ডাবলু মন্সি ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম রাজিব শেখকে কোপ দিলে তার নাড়িভূড়ি বের হয়ে ঝুলে পড়ে। এ অবস্থায় জব্বারের ভাই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জব্বার শেখ ও রাজিব শেখকে উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জব্বার শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর ভিকটিম রাজিবকে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে এলাকাবাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে এবং ক্ষোভে ফেটে পরে। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজিত জনতা আসামীদের চারটি ঘরে আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করে দিয়ে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বর্বর হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বস্তরের এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে । এক পর্যায়ে সোমবার সকালে চিতলমারীর ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাধারন শিক্ষার্থী ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও জব্বার শেখের হত্যাকান্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। যা নিয়ে জনমনে চা ল্যের সৃষ্টি হয়। হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে পেরে খুলনা র্যাব-৬ (সদর কোম্পানি) খুলনার একটি আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রাখে। অভিযানের এক পর্যায়ে সোমবার রাতে ৩ জন কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের চিতলমারী থানায় হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানানো হয় ওই মেইল বার্তায়।