জন্মভূমি রিপোর্ট : চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে টানা অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রার পারদ উপরে উঠতে উঠতে এখন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। শুক্রবার দুপুর ৩টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ১১ শতাংশ। যা এ মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, ২৬-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, সূর্যের তীব্র প্রখরতায় ঘরের বাইরে বেরানো এক প্রকার দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে আগুনের ফুলকি ঝরছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল এ জেলায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর ২১ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৩ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি ও ২৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ১৬ শতাংশ। ৩ ঘণ্টা পর দুপুর ৩টায় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, চলতি মাসের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময় জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তিনি আরও জানান, ২৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ করেন রাকিবুল হাসান।
এদিকে, বাইরে শরীর ঝলসানো রোদ ও তীব্র গরমে মানুষ এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে। তারা এই তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাইরে অবস্থান করছেন।
ইটভাটা শ্রমিক ফয়সাল বলেন, মালিককে বলছি এখন কাজ করবো না। আগে নিজে বেঁচে নিই। তারপর কাজ করবো। তিনি শুনছে না। কি আর করবো কাজে আসতেই হয়েছে।
শহরের বিল্লাল হোসেন বলেন, কি আর করবো লোকসান এবার খেতেই হবে। কারণ কয়েকজন মিলে প্রায় ২০ বিঘা আম বাগান কিনেছি। এমনিতেই আমের মুকুল কম এসেছিল। যা ছিল তাও ঝরে যাচ্ছে। পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বেসরকারি কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান আবু হাসান, এই রোদ ও গরমে বাইসাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে মানুষের খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে। তবে বসে থাকলেও হবে না। দিনশেষে নিজের পরিবারের জন্য খাবার কিনে বাসায় ফিরতে হবে।