জন্মভূমি ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ম্যুরাল এবং দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে এসব ভাঙচুর করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় চত্বরের শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ম্যুরাল ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ম্যুরালের স্থাপনা। আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়। মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।
গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে শহরের সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে যান তাঁরা। এ সময় ডিসি অফিস চত্বরে স্থাপিত শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবের প্রতিকৃতি এবং ম্যুরালের স্থাপনায় ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা।
গত ৫ আগস্ট এসব ম্যুরাল থেকে ছবি মুছে দেওয়া হয়। এবার অবশিষ্ট স্থাপনা হাতুড়ি, কুড়াল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। পরে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পুরো স্থাপনা। এরপর শিক্ষার্থীরা শহরের পৌরসভা মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবনের ভেতরে ঢুকে শেখ হাসিনার ছবিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার ছবি ভাঙচুর করা হয়। পরে তাঁরা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙেন।
এ সময় উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের মুজিব ম্যুরালের কবর রচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনা দেশব্যাপী যে ফ্যাসিবাদী চিহ্ন রেখে গেছেন, আমরা তা নিশ্চিহ্ন করতে আজ এখানে একত্র হয়েছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।’
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা এ প্রতিক্রিয়া দেখান।
যশোরে শেখ মুজিবের সব ভাস্কর্য ও শেখ হাসিনার নামফলক ভাঙচুর
জন্মভূমি ডেস্ক
যশোরে সাতটি স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শেখ হাসিনার নামফলক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এসব ভাঙচুর করে।
গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে এসব ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহ আকবার’সহ ফ্যাসিবাদবিরোধী নানা স্লোগান দেওয়া হয়। এর আগে থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জড়ো হতে শুরু করে। যদিও গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনা কম-বেশি ভাঙচুর করা হয়েছিল।
ছাত্রসমাজের উদ্দেশে শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণের ঘোষণা আসার পরপরই পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রথমে যশোর পৌরসভার ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর স্লোগান দিতে দিতে তারা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বকুলতলায় ভাস্কর্য, জেলা পরিষদের ভেতরে ম্যুরাল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেখ হাসিনার স্মৃতিফলক, মনিহার বিজয় স্তম্ভের প্রাচীরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের দৃশ্যপট খোদাই করা ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। সেখান থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা সদর উপজেলা পরিষদের ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া অভয়নগর, ঝিকরগাছা, কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর হয়েছে বলে শুনেছি। কে বা কারা করেছে সেটা জানা নেই।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
জন্মভূমি ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সদস্যরা।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে হামলা চালান তারা। এসময় তাদের ‘নারায়ে তাকবির, কাউয়া কাউয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। এই প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত দুপুর ১টা ৫০ মিনিটেও হামলা চলমান রয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার নিজস্ব ফেসবুক পেজ থেকে এই হামলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে লিখা হয়, ‘নোয়াখালীর বিপ্লবীরা, বুলডোজার নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মার্চ টু কাউয়া কাদেরের বাড়ি! আজ বেলা ১১টা।’
দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ বাড়ির ভেতরে, আবার কেউ বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। তারা ‘নারায়ে তাকবির, কাউয়া কাউয়া’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। এ সময় তারা বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র, ছাদের রেলিংয়ে ও সামনে থাকা পোড়া একটা গাড়িতে আগুন দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে ওবায়দুল কাদেরের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। যেটি আছে সেটা তার ছোট ভাই কাদের মির্জার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল বেলা ১১টায় হামলা করা হবে। তাই সকাল থেকে সাংবাদিকরা বাড়ির সামনে অবস্থান করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক জনতা বাড়িটা দেখতে আসে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ সেই রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন ছাত্র-জনতা। সবাই কাউয়া কাউয়া স্লোগান দিচ্ছে। এমন খারাপ রাজনীতি কেউ করলে তাদের এমন পরিণতি হবে, এটাই আমাদের শেষ কথা।