চুয়াডাঙ্গা : দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ভয়াবহ তাপমাত্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ এসেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। গত ২ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায়। আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে জেলাটিতে। এ নিয়ে টানা ১৫ দিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ১৮ শতাংশ। গতকাল রোববার (১৬ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে তীব্র তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশুরা। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। এ কারণেই ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, ২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার করা হয়। তিন বছর পর ২০০৫ সালের ২ জুন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই এখন পর্যন্ত এই জেলার রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায় জেলার তাপমাত্রা। গত ১৬ দিন ধরে একাধারে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এই জেলায়। গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। পরদিন ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ১৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, ১৬ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের পক্ষ থেকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলা হচ্ছে। লেবুর শরবত ও স্যালাইন খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। তবে এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস। চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শহর, গ্রাম-গঞ্জে সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাহির না হয়। রোজাদারদের সন্ধার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।