★ চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত ১৬ শতাংশ
★ ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে
★ ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় বিক্রেতারা
জন্মভূমি রিপোর্ট : পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’ বাকি মাত্র তিন দিন। আগামী ১৭ জুন সোমবার দেশব্যপী মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারও জমে উঠেছে খুলনা নগরীর জোড়াগেটস্থ কোরবানির পশুর হাট। খুলনাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে পশু নিয়ে আসছে ব্যাপারীরা। হাটে ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম হলেও পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যেগে জোড়াগেটে এই পশুর হাট উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। প্রথমদিন গরুর পরিমাণ খুব একটা ছিল না। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে হাটে তত বেশী পশুর আমদানি হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে হাটে ক্রেতার সমাগম ছিল বেশ। মাইকিং করা হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য।
ক্রেতা আব্দুল গফফার নগরীর বয়রা এলাকা থেকে গরু ক্রয় করার জন্য সকাল নয়টায় হাটে এসেছিলেন। তিন ঘন্টা ঘুরে একটা গরু ক্রয় করেছেন। তাও অনেক দাম দিয়ে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম একটু বেশী। বিশেষ করে বড় গরু থেকে মাঝারি সাইজের দাম বেশী বলে জানিয়েছেন তিনি। সোনাডাঙ্গা থেকে কুরবানীর পশু ক্রয় করতে এসেছেন চাকুরীজীবী মো. আসাদুজ্জামান। ভোর থেকে হাঠে অনেক গরু দরদাম করেছেন। গরুর দাম করায় ক্ষমতার বেশি হওয়ায় তিনি একটি ছাগল ক্রয় করেছেন। গরুর দাম বেশি থাকায় বিক্রেতা সাহেব কাজী নড়াইল থেকে ১৫ টি গরু নিয়ে এসেছেন জোড়াগেট হাটে। গত দুই দিন হাটে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও আজ সকাল থেকে আসতে শুরু করেছে, বেচাকেনাও মোটামুটি। সকাল থেকে তার সাতটি গরু বিক্রি হয়েছে, বাকী রয়েছে ৮টি। এগুলো বিক্রি হলে তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন। পশুর দাম বৃদ্ধির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাবার ও ঔষধের দাম বেড়েছে। খরচও বেড়েছে।
এ বছর পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে খুলনায় ষাড়, বলদ, গাভী ও মহিষ মিলে মোট ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছর এ জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৩টি। এতে উদ্বৃত্ত থাকার সম্ভবনা রয়েছে ২১ হাজার ৮৩৫টি পশু। এরমধ্যে যদি ভারতীয় গরু দেশের বাজারে ঢুকে তাহলে উদ্বৃত্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। এ নিয়ে ব্যাপক শঙ্কায় রয়েছে এ অঞ্চলের খামারিরা।
এদিকে পেশাদার খামারিরা বাণিজ্যিকভাবে গবাদি পশু পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। সাধারণত ঈদে পশু বিক্রি শেষে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার পরও প্রায় দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখেন তারা।
খামারীরা বলছেন, গরু লালন পালন করতে যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়। তাছাড়া শ্রমিক খরচ এখন আগের চেয়ে বেশি। তবে ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে লাভের অংকও বাড়বে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে দেশীয় খামারিরা অতিরিক্ত মূল্য দাবি করে। বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ গ্রামের খামারি ফুজ্জাত শেখ ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের বিচিত্রা মন্ডল জানান, তারা প্রতি বছর ৬০/৭০টি করে গরু লালন পালন করেন। গত ঈদে লোকসানে ছিলেন। এ বছর খাবারের মূল্যও অনেক বেশি। তারপরও যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে লোকসানের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশীয় জাতের গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলায় যথেষ্ট পরিমাণ গরুর খামার রয়েছে। আশা করি এ অঞ্চলে উৎপাদিত গরু ঈদ-উল-আযহায় চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। তিনি জানান, ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে খামারিদের সঙ্গে সমন্বয় না করার কারণে অনেক সময় প্রকৃত খামারীরা ঋণ থেকে বঞ্চিত হন।