মোঃ এজাজ আলী : জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘূর্ডুঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙ্গনে সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদগুলো লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এক দিকে যেমন সমুদ্র পৃষ্ঠের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনীত কারনে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। সূত্রমতে ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর চট্রগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলে শ্মরণকালের ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী উপকূলে সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে খুলনা, সাতক্ষীরা উপকূলে আইলার ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে গোটা উপকূলীয় এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। এছাড়া আইলা, আম্ফান, নার্গিস, সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ডুঝড় চিত্রাং উপকূলীয় এলাকায় আঘাত আনে। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী-ভাঙ্গন যোগ হয়ে লন্ড ভন্ড করে দিচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কয়রা, দাকোপ, আশাশুনি ও শ্যামনগর এলাকা প্রতিনিয়ত বেঁিড়বাধ নদঅগর্ভে বীলিন হচ্ছে। উপর্যুপরি নদী ভাঙ্গন কেড়ে নিচ্ছে শত শত একর জমি, বসত ভিটা, জিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। গেল বর্ষা মৌসুমে কয়রার অনেক এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ সকল এলাকায় দিন যতই পার হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে জমি জায়গা হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা সরকারের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরি, পয়ঃ নিস্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর অগভীর নলকূপ স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে সরকারি অনেক সংস্থা দেশের উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ঝড়, জলোচ্ছ্বাসজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। সম্প্রতি সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর কারনে নদী ভাঙ্গন কিছুটা কমেছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় দাতা-সংস্থাদের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্প চালু থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে এ অঞ্চলের জনসাধারনের জানমাল অনেকটা রক্ষা করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে কয়রা, পাইকগাছার সংসদ সদস্য মোঃ আকতারুজ্জামান বাবুর প্রচেষ্টায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প পাশ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে বাঁধের কাজ নির্মাণ করা হবে। কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।