By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসীর জন্য মহা বিপদ
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসীর জন্য মহা বিপদ
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসীর জন্য মহা বিপদ

Last updated: 2025/10/24 at 4:57 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয়বাসীর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাবিপদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ‌। দিন দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছেন উপকূলের মানুষ ‌। কিছু কিছু মানুষ উপকূল ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা সদরে ‌। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ভ্যান রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করছেন দৈনন্দিন জীবনের অর্থ ‌।জলবায়ুর প্রতিনিয়ত বদলে বদলাচ্ছে আবহাওয়া ও পরিবেশ। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মানুষের যাপিত জীবন ও অর্থনৈতিক খাতগুলোয়। এতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট বিভিন্নভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। সংকটে রয়েছে উপকূলবাসীর জীবন।
নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি, বাস্তুহারা হচ্ছে মানুষ, উৎপাদন কমছে কৃষিতে, মারা যাচ্ছে পুকুর-ঘেরের মাছ। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর হওয়ায় হুমকিতে পড়েছেন কৃষিজীবী মানুষ। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সুন্দরবন, উপকূল সুরক্ষা, সুপেয় পানি, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জলবায়ুসহিষ্ণু ও পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বাগেরহাটের বিভিন্ন সংগঠন।
জার্মান ওয়াচ গ্লোবালের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই-২০২১) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের একটি। ঝুঁকি ও ক্ষতিগ্রস্তের বিবেচনায় দেশের অবস্থান সপ্তম।
বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তালিকায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রয়েছে। এ রকম অকস্মাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি নিম্নাঞ্চল ও প্লাবনভূমি আংশিক অথবা স্থায়ীভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের বিশ্লেষণ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অরক্ষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দাবদাহ ও খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মানুষকে।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় চিংড়ি মৌসুমের শুরুতেই প্রচণ্ড দাবদাহ, হঠাৎ বৃষ্টি ও ভাইরাসে আশঙ্কাজনক হারে মারা গেছে সাদাসোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ি। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে ঘেরের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চিংড়ি মারা যাওয়ায় অধিকাংশ চাষি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই মৌসুমে চিংড়িতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।
রামপাল উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন চিংড়ি চাষে বিপর্যয় ঘটার অন্যতম কারণ। বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর লবণসহিষ্ণুর উপযুক্ত মাত্রা ১৫ থেকে ২০ পার্টস পার থাউজেন্ড (পিপিটি)। জলবায়ুগত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, লবণাক্ততা কমে যাচ্ছে। ঘেরের পানির তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। লবণাক্ততা কমে বেশির ভাগ ঘেরে ৫ থেকে ৭ পিপিটি, কোনো কোনো সময় এ মাত্রা ২ থেকে ৩ পিপিটিতে নেমে যাচ্ছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার মাছচাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুল হক মোড়ল বলেন, ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে মাছ চাষ করি। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে আয় ততই কমছে। ২০০৫ সালের পর থেকে হোয়াইট স্পট ভাইরাস, ইয়োলো হেড, ব্যাকটেরিয়াজনিত কালো দাগ রোগে চিংড়ি আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা সাধারণ চাষিরা এর কারণ বের করতে পারিনি। মাটির উর্বরতাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম রাকিবুল ইসলাম জানান, চিংড়ির ভাইরাস রোধে সরাসরি কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি ঘের প্রস্তুত ও মানসম্মত পোনা মজুত নিশ্চিত করতে পারলে ঝুঁকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কার্তিকদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মেহেরুন বেগম। তার স্বামী-সন্তান নেই। গত কয়েক বছরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদ তিনবার কেড়ে নিয়েছে তার বসতবাড়ি। আবার ভাঙতে ভাঙতে চলে এসেছে ঘরের কোণে। একচিলতে ঘরটি ছাড়া তার কোনো সম্বল নেই, যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মান্নানের তিন বিঘা জমি রয়েছে। আগে এসব জমি থেকে বছরে ধানে খোরাকি হয়ে যেত। কিন্তু এখন লোনা পানি আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় চাষ করতে পারছেন না ধান।
তিনি বলেন, মার্চ-এপ্রিল মাসে লোনা পানির প্রভাব বেশি থাকে৷ এতে ধানের বীজতলা ও বেড়ে ওঠা ধান নষ্ট হয়ে যায়। অন্য কোনো রবিশষ্যও চাষ করা সম্ভব হয় না তার পক্ষে।
এদিকে জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে আষাঢ়ে পা দিলেও বাগেরহাটের মোংলায় নেই বৃষ্টির দেখা। প্রায় দুই মাস ধরে অনাবৃষ্টি ও দাবদাহে  শুকিয়ে গেছে জনপদের সব পুকুর ও ডোবা। দেখা দিয়েছে সুপেয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত পানির তীব্র সংকট। অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গত ১৫ জুন মোংলা উপজেলা ইমাম পরিষদের আয়োজনে ইসতিসকার নামাজ (বৃষ্টি প্রার্থনা) আদায় করেছেন মুসল্লিরা। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য বিশেষ দোয়া চেয়ে কান্নাকাটি করেন হাজারো মুসল্লি।
বারুইখালী গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, গরম এলেই তীব্র পানির সংকটে ভুগি আমরা। প্রচণ্ড গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশপাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে এ পানিতে গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়।
মোংলার চাঁদপাই ইউনিয়নের মালগাজী গ্রামের একটি পুকুরের ওপর প্রায় তিন মাস (মার্চ-মে) নির্ভরশীল থাকতে হয় সহস্রাধিক পরিবারকে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপে এ বছর বেশির ভাগ পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ও লবণাক্ত হয়ে পড়ায় পুকুরটি জুন মাসেও কাজে আসেনি সাধারণ মানুষের। বাধ্য হয়ে দূরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি আনেন স্থানীয়রা। ক্ষেত্রবিশেষে পাড়ি দিতে হয় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ। জানাচ্ছিলেন গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হায়াত মজুমদার।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাগেরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু শরণখোলা উপজেলাতেই ৫৪৭টি পুকুরে স্থাপন করা পিএসএফের মধ্যে ৩৮৬টি অকেজো। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে স্থাপন করা অগভীর নলকূপের বেশির ভাগই নষ্ট। একই চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য উপজেলায়ও। সুপেয় পানির স্তর নেমে যাওয়াতেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে জেলায় ঠিক কী পরিমাণ পিএসএফ-নলকূপ অকেজো রয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি দপ্তরটি।
উপকূলবাসীর পানি সংকট নিরসনে কয়েক বছরে সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও সংকট মিটছে না। চলতি অর্থবছরে পাঁচটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৩২৭টি গভীর নলকূপ ও ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫১৩টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন করা হয়েছে। আগের বছরগুলোয়ও প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে জেলার পানি-সংকট নিরসনে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে উপকূলে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার ওপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, বাগেরহাটে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া সুপেয় পানির সংকট নিরসনে গভীর নলকূপ স্থাপন, পুকুর খনন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন করা হয়েছে।
উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপপন্ত্রী ও বাগেরহাট ৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্যও নানা পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বাগেরহাটের রামপালে স্থানীয়দের সুবিধার্থে লোনা পানি থেকে সুপেয় পানি উৎপাদনকারী ‘লবণাক্ততা দূরীকরণ (আরও) প্ল্যান্ট’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এ প্ল্যান্ট থেকে প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদিত হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে উপকূল নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বেশ কিছু দাবির কথা বলছে। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—
১. বিনা সুদে ও দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে গৃহ ঋণের ব্যবস্থা করা,
২. নিরাপদ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা,
৩. লবণসহিষ্ণু চাষাবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটানো,
৪. ম্যানগ্রোভ ফরেস্টেশনের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলে লবণাক্ততা হ্রাসে উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ;
৫. শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান ও স্বল্প অথবা বিনা সুদে ঋণদান;
৬. স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প কার্বন উৎপাদনকারী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা সাতক্ষীরার মানুষ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বসবাস করছে। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে তাদের জীবন। কৃষক তার জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না, হালের পশু ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর খাদ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। লবণাক্ততার জন্য চাষযোগ্য জমি ঊর্বরতা হারাচ্ছে। এ ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষকে স্বাস্থ‌্যজনিত বিভিন্ন সমস‌্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাতক্ষীরার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬২৬ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৮১ শতাংশেরও বেশি জমি অর্থাৎ ১ লাখ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। আর পতিত জমি রয়েছে ৪০ হাজার ৯৮১ হেক্টর।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটায় সাতক্ষীরায় বন্যা, খরা ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি মাটি ও পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। এতে ক্রমেই আমন ধানের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গত চার বছরের ব্যবধানে আমন ধান উৎপাদন কমেছে ৩৩ হাজার টন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে এ জেলায় রোপা আমন চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬ টন, ২০২০-২১ মৌসুমে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টন, ২০২১-২২ মৌসুমে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭২৮ টন এবং ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে আমন চাল উৎপাদন হয় ২ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৮ টন। সেই হিসাবে ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৩ হাজার ২৩৮ টন উৎপাদন কমে গেছে।
কৃষির মতো সাতক্ষীরার সড়কগুলোতেও ফুটে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। এ কারণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে হাজার হাজার রেইনট্রি মারা গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন আক্তার জানান, রেইনট্রি গাছ মরে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষার বেড়ে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। মৌসুমি বৃষ্টি না হলে রেইনট্রি খাদ্যসংকটে পড়ে। তবে বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও গাছ মরে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে উপকূলে। এতে সহায়-সম্পদ হারানোর পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট, চিকিৎসার অভাব, নারী-শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা জীবনযাত্রা ও পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। উপকূলের এমন অবস্থার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০০৯ সালের আইলার পর থেকে গত ১৫ বছরে এক ডজনের বেশি দুর্যোগের কবলে পড়েছে এ জেলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’, ২০১৩ সালের ‘মহাসেন’, ২০১৫ সালের ‘কোমেন’, ২০১৬ সালের ‘রোয়ানু’, ২০১৭ সালের ‘মোরা’, ২০১৯ সালের ‘ফণী’, ২০১৯ সালের ‘বুলবুল’, ২০২০ সালের ‘আম্পান’, ২০২১ সালের ‘ইয়াস’, ২০২২ সালের ‘অশনি’ ও ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’।
প্রতিবছরই ছোট-বড় মিলিয়ে তিন-চারটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয় সাতক্ষীরায়। এতে জেলার উপকূলবর্তী তিন উপজেলা শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও আশাশুনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট নদীভাঙনে গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বহু কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে ওই তিন উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম। এতে সহায়-সম্বল হারিয়ে বাসস্থান ছেড়েছেন অনেক মানুষ।
উপকূলের বাসিন্দারা বলছেন, উপকূলের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলের শিশুরা শৈশবের ডানা মেলে অপুষ্টি আর অশিক্ষায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। সারা বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের রোগের ৮৮ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) ২০১২-১৩তে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে ২৬ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সাতক্ষীরার প্রায় ৩০ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এ জেলার পুষ্টিহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়।
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তন-সম্পর্কিত বিষয়ে সাতক্ষীরার দুটি উপকূলীয় উপজেলা নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ বছরের প্রায় সাত মাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইটভাটায় অবস্থান করেন। আর এ সময় ওই সব পরিবারের শিশুসন্তানরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে যায়। জড়িয়ে পড়ে শিশুশ্রমে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ও পুষ্টির অভাব শিশুদের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে এ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩৩ হাজার ৯৩৭ জন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছিল। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৮৭ জন। অর্থাৎ ওই ব্যাচের কমপক্ষে ৭ হাজার ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আর এই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম একটি কারণ বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বাসিন্দা হুদা মালী বলেন, ‘খরা, ঝড়, বৃষ্টি ও নদীভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আইলার পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভিদশূন্য। লবণাক্ততার কারণে সব গাছ মারা গেছে। এলাকায় বসবাস করা খুবই কষ্টের।’ সব সময় সুপেয় পানির অভাবে থাকতে হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরার পাঁচ লাখের বেশি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে। ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডবের পর সুপেয় পানির সংকট তীব্র হয় সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে। নষ্ট হয়ে যায় সুপেয় পানির উৎস।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, প্রতি লিটার পানিতে শূন্য থেকে ১ হাজার মিলিগ্রাম লবণ থাকলে সে পানি পানযোগ্য। কিন্তু উপকূলে প্রতি লিটার পানিতে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার মিলিগ্রাম লবণ রয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরার ১৩ শতাংশ মানুষ খাওয়ার পানির সংকটে রয়েছেন বলে জানানো হলেও বাস্তবে এই চিত্র আরও ভয়াবহ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লির্ডাস, ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডসহ জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের তথ্যমতে, জেলার ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮১ জন মানুষের মধ্যে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় এলাকায়। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও মাটির লবণাক্ততা উপকূলের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের সময় অধিক শীত, গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম এবং বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে নদীভাঙনে এসব এলাকার মানুষ উদ্বাস্তু হচ্ছে।’

জন্মভূমি ডেস্ক October 24, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৩ হাজার কোটি টাকা
Next Article সাতক্ষীরায় উপকূল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে

দিনপঞ্জি

October 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
« Sep    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় উপকূল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলবাসীর জন্য মহা বিপদ

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
অর্থনীতি

২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৩ হাজার কোটি টাকা

By জন্মভূমি ডেস্ক 2 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় উপকূল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 minutes ago
তাজা খবররাজনীতি

ভুল স্বীকার করলেন স্বৈরাচার হাসিনাপুত্র জয়

By জন্মভূমি ডেস্ক 3 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

৭ জেলায় সড়কে ঝরল ১২ জনের প্রাণ

By জন্মভূমি ডেস্ক 4 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?