
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহির নিশ্চয়তাসহ চলমান সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়ে জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৩তম অধিবেশনে পাস হয়েছে প্রস্তাবটি। মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রসঙ্গটি তুললেও বিপরীতে অধিকাংশ দেশ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার অনিশ্চয়তায় দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার আবশ্যকতা তুলে ধরে।
একই সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান অপর্যাপ্ত অনুদান-সাহায্য বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সর্বোপরি, রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দায়ী ব্যক্তিদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় আনাসহ তদন্ত প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকেও, যা সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক অবশ্যই।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমেদ খানের বাংলাদেশ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করাসহ কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্ষণ ও গোলাগুলির দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। এ পর্যন্ত আইসিসির ১১টি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। প্রধান কৌঁসুলি স্বীকার করেছেন, রোহিঙ্গা বিতাড়নের মামলাটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। মিয়ানমার সহযোগিতা না করায় বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকারের বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে। তবু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর ঘৃণ্য নৃশংসতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কাজটি জরুরি। এর পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বকেও এই সমস্যার জরুরি সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, যা ইতিবাচক।
গত বছর ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশ্বাবাসীর সামনে। এগুলোর অন্যতম- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ওআইসিকে অন্তর্ভুক্ত করে মিয়ানমারে অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব পাবে বলেই প্রত্যাশা। এর জন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক পরিম-লকে আরও চাপ প্রয়োগ করতে হতে পারে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শুনানির বিষয়টিও একটি বিরাট অগ্রগতি। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবটি অবশ্যই বহুলাংশে চাপ সৃষ্টি করবে আন্তর্জাতিক মহলে।

