জন্মভূমি ডেস্ক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যদি ধাপে ধাপে আয়োজন করা যায় তাহলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হবে। এতে নির্বাচনের আয়োজন করতেও সহজ হবে।
আজ রোববার (২ জুন) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনের পর টিআইবির সঙ্গে বড় পরিসরে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ইসি। যে কারণে সংস্থাটিতে তারা আমন্ত্রণ জানায়। এর আগে দুই পক্ষে স্বল্প বার্তালাপ হচ্ছিল। ইসি ভবনে রোববার পুরো কমিশন টিআইবির সঙ্গে বৈঠক করে বলে জানান ইসি প্রধান।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাদের মূল দাবিটা ছিল আমরা যেন দ্রুত তথ্যটা দিই৷ উনারা তথ্যের অবাধ প্রবাহ চাচ্ছেন৷ যেকোনো তথ্য যেন আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উনারা বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হয়তো কিছুটা পালনটা করছি না। আমরা বলেছি সেটা, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে৷ যেমন হলফনামায় কে কী সম্পত্তির বিবরণ দিল, সেটা আমাদের কাছে থাকবে, বা আপলোড করে দিচ্ছি। যে কেউ তথ্য নিতে পারেন, দুদক নিতে পারে। আমরা সহযোগিতা করবো৷ আমাদের বলা হয়নি তাদের স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে। কোনো কর্তৃত্ব বা দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে৷ নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে ফেয়ার হয়েছে। একটা দক্ষতার অভাব রয়েছে। সেটা উনারা জোর দিয়ে বলেছেন। আমরা বলেছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা। আমরা বলেছি, সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যা নিরসন না হলে, নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরও স্টেবল হবে না। পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেলে নির্বাচনটা আরও সুন্দর হতে পারে।
সাবেক এই আইন সচিব বলেন, পদ্ধতিগতভাবে যদি উন্নয়ন করা যায় ব্যক্তির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে; যেমন- একটা হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস, আরেকটা হলো সিস্টেম অব ইলেকশন। আমরা বলেছি, উনারাও বলেছেন প্রপোরশনাল বলে একটা সিস্টেম আছে। আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা, যেটা আমাদের সংসদে নারী আসনের ক্ষেত্রে আছে। সেই সিস্টেমের কথা আমরাও বলেছি, উনারাও বলেছেন। আমরা বলেছি এগুলো নিয়ে আপনারা গবেষণা করতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে যদি আপানারা বলতে পারেন ক্ষমতা থেকেও নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা যায়, যায় কিনা সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি কোনো গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পাশ করতে পারেন, সংসদ থেকে, তাহলেও যে আপনারা বলছেন জনগণ অংশ নিচ্ছেন না, এগুলোও কমে আসবে। আর আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনটা যদি একাধিক দিনে করা যায়, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভোটকেন্দ্রে অধিক সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন সহজ হবে। মনিটরিংটা সহজ হবে।
সিইসি আরও বলেন, বৈঠকে আরেকটা জিনিস বলেছি, আমাদের প্রযুক্তি ইভিএম নিয়ে অনাস্থা ছিল, এখনো আছে। আমারা এখনো বলছি, ইভিএমে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি যে এখানের ভোট ওখানে চলে গেছে৷ আমরা এখন অনেক স্পষ্ট, এই মেশিনে সেটা একেবারেই অসম্ভব। তবে ইভিএমটাকে আরও সহজ করা যেতে পারে।
মানুষের যদি আস্থা ফেরে তবে ভিভি প্যাডটা লাগিয়ে দেওয়া যায়। তবে এটা আমরা বলতে পারি না, যদি দলগুলো একমত হয়। তাহলে আমরাও এগ্রি করবো। নির্বাচনটাও অধিক সুষ্ঠু হবে। এই প্রযুক্তিকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আজকে না হলেও দশ বছর পরে, দশ হাজার বছর পরে হলেও এই সমস্ত প্রযুক্তি লাগবে। এটা আমরা বলেছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা সব অ্যাকশন নিই না। কিছু অ্যাকশন রিটার্নিং কর্মকর্তা নেন৷ হলফনামা বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, সে-ই নির্বাচন কমিশন। শত শত আপিল হয়, এখানে বাতিল হলে কোর্টে যায়, সেখানে ফিরে পায়। আবার আপিলে যায়। সেখানকার সিদ্ধান্তগুলো চ্যালেঞ্জ করি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা চেষ্টা করি। আমাদের যে অনন্ত সক্ষমতা আছে, সেটা মোটেই না। নির্বাচন কমিশন কখনো একা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যদি না রাষ্ট্র এবং সরকারের পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে। রাষ্ট্রের যদি পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে তাহলে প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে বাধ্য।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো আলাপ আলোচনা দেখছি না। তাদের মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট৷ এতো প্রকট বৈরিতা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সিইসি নয়, এই প্রকট বৈরিতাটা রাখলে সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হবে। এই বৈরিতা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। টিআইবিকে বলেছি, আপনাদের মতো আরও সিভিল সোসাইটি আছে, তারাও ভূমিকা পালন করতে পারেন৷
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা হয়তো আমাদের রিপোর্টে পরামর্শ রেখে যাব। আমরা তো চলেই যাবে, পরবর্তী কমিশন যেন করতে পারে। সব দল বসেই তো ভারত ভাগ হলো। সেটা তো একদিনে হয়নি।