বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে মাত্র ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর। তারপরও বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্তবিস্তারি প্রভাব! কেন? গবেষকরা বলছেন, সাহিত্য রচনার সময়কালের ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন নজরুলের প্রভাব শতাব্দী পেরিয়ে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
মানবতাবাদী কবি নজরুল একুশ শতকে এসে হয়ে উঠেছেন মনুষ্যত্বের কবি। যখন দেশে দেশে সা¤প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বাড়ছে। তার বিপরীতে, অসা¤প্রদায়িক ও মানবতার কবি নজরুল চর্চার বিকল্প নেই।
আজ বুধবার ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯। সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাÐের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সা¤প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদÐ দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।
রবীন্দ্রসৃষ্ট বিশাল জগতের পাশে কবি নজরুল গড়ে তোলেন নিজস্ব জগৎ। সেখানে ফুটিয়ে তোলেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের সদম্ভ অভ্যুদয়কে এই বলে স্বাগত জানিয়েছিলেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু, আঁধারে বাধ অগ্নিসেতু’।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ ইং। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এ সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৭ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত